ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি? কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখবেন?

প্রকাশিত: ২:১১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০ | আপডেট: ২:১১:পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০
জাহিদ হাসান, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, মানারাত ইন্টারন‍্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

একজন ব্যাক্তি, তিনি যদি কোন ডিজিটাল ডিভাইস, এটা মোবাইল ফোন হতে পারে, কম্পিউটার হতে পারে বা অন্য কোন ডিজিটাল প্লাটফরমে আরেকজন ব্যক্তি সম্পর্কে কোন মিথ্যা বা মানহানিকর কিছু বলে বা যেকোন বিষয়ে তিনি কোন ধরণের গুজব রটনা করেন, কোন বানোয়াট তথ্য তিনি শেয়ার করেন, যার ফলে দেশ ও রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এবং এটি অন্যর জন্য ক্ষতিকর হয়। সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা যাবে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস
ডিজিটাল ডিভাইস ও কম্পিউটারে বেআইনি প্রবেশ: অপরাধ করার উদ্দেশ্যে কেও যদি অন্য কোন ব্যাক্তির অনুমতি ছাড়া তার ডিজিটাল ডিভাইসে প্রবেশ করেন। যেমন ধরুন: কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি। তাহলে এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই কাজ সরাসরি আপনি নিজে না করে যদি অন্য কাওকে করতে সহায়তা করেন, তাহলেও একি ধরণের শাস্তি হবে।
 
এই শাস্তি হচ্ছে তিন(৩) বছরের কারাদণ্ড।
 
কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি করা:-
আপনি যদি কারও কম্পিউটার কিংবা কম্পিউটার সিষ্টেমে ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করেন। তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দৃষ্টিতে আপনি অপরাধি হবেন।
উদাহরণ স্বরূপ: কোন ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করানো কিংবা কারও কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে তথ্য উপাত্ত তার অজান্তে সংগ্রহ করেন।
 
এই জন্য আইনে সর্বোচ্ছ ৭ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। এছাড়া একজন ব্যাক্তিকে উভয় প্রকার সাজাও তাকে দেওয়া যেতে পারে।
 
মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রোপাগাণন্ডা:-
এই বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শ কাতর। এখানে সাজার মাত্রাও বেশি। মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনপ্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালনা করা হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাজা হবে। এ কাজ আপনি নিজে না করে যদি অন্য কাওকে করার জন্য মদদ দেন তাহলেও কিন্তু একই ধরণের সাজার ব্যবস্থা করা আছে।
 
এর সর্বোচ্ছ ১৪ বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্ছ ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার সাজা হতে পারে।
 
ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি:-
এর একটি বড় উদাহরণ Facebook কোন ব্যাক্তি যদি আরেক জনের Facebook একাউন্ট হ্যাক করে বা তথ্য মুছে ফেলে কিংবা নতুন কোন তথ্য যুক্ত করে তাহল এটি ডিজিটাল জালিয়াতি। এ বিষয়টি আইনে পরীষ্কারভাবে বলা আছে। এটি কারও জিমেইল এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
 
এই জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্ছ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে অথবা উভয় প্রকার সাজাও হতে পারে একসাথে।
 
পরিচয় প্রতারণা এবং ছদ্মবেশ ধারণ:-
আপনি যদি অন্য কোন ব্যাক্তির নাম অথবা ছবি ব্যাবহার করে ভুয়া Facebook, টুইটার কিংবা ইণ্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য যেকোন ধরণের একাউন্ট খোলেন। তাহলে এটি একধরণের প্রতারণা। এটা করা যাবে না।
 
এর শাস্তি সর্বোচ্ছ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫ লক্ষটাকা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার সাজা হতে পারে।
 
আক্রামণাত্নক, মিথ্যা বা ভয় দেখানো:-
যদি অনলাইনে এমন কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন যেটি মিথ্যা হওয়া সত্ত্বেও আপনি জানেন এটি মিথ্যা কথা কিন্তু তারপরও কোন ব্যাক্তিকে বিরক্ত অপমান বা হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আপনি করছেন এবং এতে যদি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয় তাহলে এটি অপরাধ হিসাবে বিবেচ্ছ হবে। আইনে বিষয়টি এভাবেই বলা আছে।
 
এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্ছ ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্ছ ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।
 
অনুমতি ছাড়া পরিচিত তথ্য ব্যবহার:-
এর মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে আপনি যদি কারও অনুমতি ছাড়া, যদি তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ডেভিড এবং ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করেন এবং ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ করেন তাহলে এটি একটি অপরাধ। যদি কাওকে যৌন হয়রানি করানোর উদ্দেশ্য কারও অজ্ঞাতে আপনি শারিরীক তথ্য কিংবা ছবি ধারণ কিংবা সেগুলো প্রকাশ বা ব্যবহার করেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেটিও এই অপরাধের মধ্যো পড়বে।
 
এর শাস্তি হচ্ছে :- সর্বোচ্ছ ৫ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় প্রকার সাজা হতে পারে।
 
ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত:-
যদি কোন ব্যাক্তি বা গোষ্টি ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য ওয়েব সাইটে বা ইন্টারনেটে কিছু প্রকাশ করে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 
এই জন্য সর্বোচ্ছ ৭ বছরের কারাদন্ড অথবা ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।
 
মানহানির তথ্য প্রকাশ:-
যদি কোন ওয়েব সাইট বা অন্যকোন ইলেট্রনিক বিন্যাসে এ ধরণের কোন অপরাধ আপনি করেন তাহলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্ছ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। একসাথে উভয় প্রকার দন্ডও হতে পারে।
 
এ মানহানির বিষয়টি বাংলাদেশে অন্য আইনেও বলা আছে। সেই আইনের মাধ্যমে এটি এখানে নির্ধারণ করা হবে। এটি নিয়ে অনেক বিতর্ক ও উদ্বেগ আছে অনেকের মধ্যে। কারণ কার কিসে মানহানি হবে এবং কিসে মানহানি হবে না সেটি কিন্তু অত্যান্ত বিতর্কর বিষয় এবং অনেকেই বলেন যদি কারও বিরুদ্ধে কোন দূর্নীতির তথ্য প্রকাশ করা হয়, তাহলে কি সে ব্যক্তির মানহানি হবে? এটি কিভাবে নির্ধারণ করবে! সুতরাং এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে।
 
কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখবেন?
যেকোন তথ্য যখন আমরা শেয়ার করছি এটি অত্যন্ত জরুরী যে আমরা সেটিকে যাচাই করব, এটি সত্য কি মিথ্যা। দ্বিতীয়ত অনেক সময় আমরা নানা ধরণের কমেন্ট বা মন্তব্য করে থাকি বিভিন্ন ধরণের স্যোসাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে। এধরণের মন্তব্য বা কমেন্ট করার আগে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এ ধরণের মন্তব্য অন্য কারও জন্য   প্রতিহিংসা মূলক কিনা, সেই ব্যক্তির মানসম্মান ক্ষুন্ন করছে কিনা, সে মন্তব্য করার কারণে সেব্যক্তি কোন ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারেন কিনা। সুতরাং যেকোন মন্তব্য করার আগে আমাদের অবশ্যই এবিষয় গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

লেখক: জাহিদ হাসান। শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ। মানারাত ইন্টারন‍্যাশনাল ইউনিভার্সিটি