এই মহেন্দ্রক্ষনে তাবলীগ জামাত-ই উত্তম জিহাদ

প্রকাশিত: ৩:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৯ | আপডেট: ৩:২৮:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৯

ডেক্স রিপোর্ট:

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার গোলামী করার জন্য। জানমাল তার হুকুম মোতাবেক খরচ করিতে হইবে। বিনিময়ে তিনি জান্নাত দিবেন। একথা আমরা সবাই জানি কিন্তু মানি কয়জনে?
জানার নাম ইসলাম না, মানার নামই হলো ইসলাম। বিশ্বমানবজািতর মধ্যে অধিকাংশ মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে অলীক কল্পনার পিছনে ছুটছে, নিশ্চয় অলীক কল্পনা বাস্তব ব্যাপারে মোটেই ফলপ্রসূ নয়। মানুষ যাহা করছে সকল বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। মানবজাতির সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে শয়তানের রেড়াজালে আবদ্ধ। সেই জন্য মানবজাতির সৃষ্টির আদিকাল থেকে সঠিক পথ ও মতের দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আল্লাহ পাক যুগে যুগে প্রত্যেক বংশ ও গোত্রের মধ্যে অসংখ্য নবী রাসুল(সঃ) দের প্রেরণ করেছেন। উদ্দেশ্য মানবজাতির কল্যান ও হিদায়াতের নছিয়ত। আল্লাহভোলা মানুষদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা দাওয়াতের মাধ্যমে। আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্য সাফল্যমন্ডিত করার জন্য উক্ত আম্বিয়ায়ে কেরামগণ দুনিয়ার লোভ-লালসা, ভয় ভীতি, তিরস্কার-ভৎসনার প্রতি কোন ভ্রক্ষেপ না করে দাওয়াত হকের মশাল জ্বালাতে অসংখ্য বাধা-বিঘœ, ঝড়-ঝান্ডা অতিক্রম করতে হয়েছে। আম্বিয়া-কেরামগণ তাদের অসংখ্য মোজেজা ও ঘটনাবলি আছে আমি সেই দিকে যাচ্ছি না। প্রত্যেক আম্বিয়া(আঃ) গণের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল দাওয়াতের দ্বারা পথহারা মানুষদের পথের সন্ধান দেওয়া, আল্লাহর সহিত সম্পর্ক স্থাপন করা যেন কোন মানুষ গোমরাহী হয়ে জাহান্নামে না যায়। এই ছিল তাদের দাওয়াত।
এই পৃথিবীতে আর কোন নবী রাসুল(সঃ) গণের আগমন ঘটবে না। আর এই দাওয়াত না থাকার কারণে মানুষ কিভাবে গোমরাহী, অজ্ঞতা, ধর্মন্ধতা, বিলাসিতা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত হয়ে অন্ধকার যুগে পতিত হয় তাহারই এক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো। হয়রত ঈসা (আঃ) এর আগমনের পর হইতে ৫৭০ বৎসর পর্যন্ত কোন নবী রাসুলগণের আগমন ঘটেনি বা কোন দাওয়াতের কাজ না থাকার কারনে মানুষ কিভাবে অন্ধকার যুগে পতিত হয়েছিল। সেই অন্ধকার যুগকে বলা হতো “আইয়ামে জাহিলিয়াত”। উক্ত অন্ধকার যুগের বহু ঘটনাবলি আছে আমরা সেই দিকে যেতে চাচ্ছি না। আমি যতটুকে শুনেছি বা কেতাব পত্র পড়ে বুঝেছি দাওয়াত ছাড়া দ্বীন জিন্দা হয় না, আর দাওয়াত ছাড়া মানুষ হিদায়াতের রাস্তা খুজে পায়না। আইয়্যামে জাহিলিয়াত যুগ অর্থাৎ অন্ধকার যুগে আল্লাহপাক সেই অন্ধকারকে প্রজ্বলিত করিবার জন্য বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ) কে প্রেরণ করেন। সেই যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। তিনি আল্লাহ প্রেরিত রাসুল(সঃ)। তিনি এসেছিলেন বিশ্ব মানব জাতির কল্যান ও হেদায়েতের জন্য। তিন আস্তে আস্তে শিশু কিশোর ও যুবক বয়সে পদার্পন করেন, নবুয়ত প্রাপ্ত হলেন এবং একত্ববাদের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন- উদ্-উ ইলা সাবিলী রাব্বীকা বিল হিকমাতি ওয়াল মাওইজাতিল হাসানাতি অর্থাৎ হে মুহাম্মদ(সঃ) আপনি বিভ্রান্ত মানবজাতিকে সুন্দর নছিয়াত এবং হেকমতের সাথে আপনার প্রভুর পথের দিকে আহব্বান করুন (আল-কোরআন)। উত্তম আখলাক, উত্তম আদর্শ ও উত্তম ভালবাসা দিয়ে মানব জাতিকে আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই এই কথা দ্বারে দ্বারে বারে বারে দাওয়াত দিয়ে এক এক করতে করতে ইসলাম ও মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে। আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্য সাফল্য মন্ডিত করার জন্য দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতা, অর্থ-সম্পদ, লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি, তিরস্কার-ভৎসনার প্রতি কোন ভ্রক্ষেপ না করে দাওয়াতের হকের মশাল জ্বালাতে অসংখ্য কষ্ট দুঃখ, শারিরীক নির্যাতন, ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিঘœ, ঝড়-ঝান্ডা অতিক্রম করতে হয়েছে। এই ভাবে দাওয়াতের দ্বারা দ্বীন জিন্দা হতে থাকলো আর আস্তে আস্তে ইসলাম ও মুসলমানের উন্নতি হতে থাকলো। বিদায় হজ্জ্বের সময় জানা গেল এক লক্ষ বা সোয়া এক লক্ষ সাহাবী(রাঃ) ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করেছেন।
প্রিয় নবী(সঃ) বললেন, আল্লাহ পাক আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমি কি তা পালন করতে পেরেছি? সাহাবীরা বললেন- শুধু পালন করা না আপনি আমাদের হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি যখন থাকব না আমার রেখে যাওয়া দ্বীনের দাওয়াতকে তোমরা শক্তভাবে আকড়ে ধরবে, কখনও পথ ভ্রষ্ট হবে না। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন- লা ইয়াযালু ত্বায়িফাতুন মিন উম্মতি মানসুরীনা আলাল হক্বকি লা ইয়াদুররুহুম মান খাযালাহুম, অর্থাৎ আমার উম্মতের মধ্যে একদল সর্বদা সত্যের পথে সু-প্রতিষ্ঠিত থাকবে। শত্রুপক্ষ তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) দাওয়াতের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নতি সাধন করেছেন। প্রিয় নবী(সঃ) আগমন হতে ওফাত পর্যন্ত অসংখ্য মোজেজা ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি আছে, আমি সেই দিকে যাচ্ছি না।
নবী(সঃ) এর পুরো জিন্দেগী হলো সুন্নত। সুন্নত ছাড়া কোন উম্মত হয় না। দাওয়াত ছাড়া কোন দ্বীন জিন্দা হয় না। আমাদের প্রিয় নবী(সঃ) এর ওফাতের সময় সোয়া লক্ষ মুসলমান ছিল আর এখন বর্তমান বিশ্বে একশত কোটির উপরে মুসলমান। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটুকু বুঝেছি ৫৭০ বছর দাওয়াতের কাজ না থাকায় যদি অন্ধকার যুগে পরিনত হতে পারে তাহলে আমাদের নবী(সঃ) ওফাতের ১৪শত বছর উত্তীর্ন, তাহলে বর্তমান বিশ্বের ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন কেন?
সঠিক পথ ও মতের দিক নির্দেশনা না থাকার কারণে সমাজে ধর্মান্ধতা, স্বার্থপরতা, অজ্ঞতা, বিলাসিতা এবং কু-সংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে মানুষ আজ গোমরাহীর দিকে ধাবিত। সেই সুযোগে নানা প্রকার ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র একের পর এক আঘাত হানছে। বর্তমান বিশ্বে নাস্তিকবাদী তাগুদী শক্তির ঘৃন্য চক্রের শিকার ইসলাম, মুসলমান, মসজিদ, মাদ্রাসা, আলেম, উলামা। নাস্তিকবাদী তাগুদী শক্তিগুলি যুগোৎপটভাবে ইসলামের প্রদীপ নির্বাপিত করতে উদ্দত। এই ফেৎনা ফেসাদের জামানায় দ্বীন ইসলামের বড় দুর্দিন, ঈমান আমল নিয়ে বেঁচে থাকা বড় কঠিন সময়। এমতাবস্থায় এই মহেন্দ্রক্ষনে আমাদের করনীয় মানবজাতির কল্যান ও হেদায়েতের জন্য সাহারা(রাঃ) আজামাঈনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ও হযরতজী মাওলানা ইলিয়াছ(রঃ) এর কৃতিত্বের কথা স্বরণ করে গোমরাহী, ধর্মান্ধতা, বিলাসিতা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানবজাতিকে দাওয়াতের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি সুনিশ্চিত করা এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর নাফরমানি বর্জন করে চলা, সকল প্রতিকুলতার মুখে দ্বীন ইসলামকে প্রাধান্য দেওয়া।
কালো কুয়াশার পর্দা ছিন্ন করে দিগভ্রান্ত মানবজাতিকে আলোর দিশায় একিভুত করতে তাবলীগ জামাতের কোন বিকল্প নাই। বর্তমান প্রেক্ষাপট সেই তাবলীগের মধ্যেও ভেজাল উদ্দেশ্য প্রানোদিত। বিধায় সার্বিক বিষয় বিচার বিশ্লেষন পূর্বক সমাজের প্রেক্ষাপটে বোঝা যায় এই মহেন্দ্রক্ষনে নির্ভেজাল তাবলীগ জামাত-ই উত্তম জিহাদ। সমাজ সংস্কারের জন্য ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা, খোদা-ভীতি অর্জন করা, ইমান একিন মোকাম্মেল করা। দক্ষতা, একনিষ্টতা, মনের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করা, নীতি নৈতিকতার আদশের্র বিকাশ ঘটানো, সুন্নতের তাবেদারী করা, দাওয়াত ও তালীমের তরগীর দেওয়া এবং যাহারা অলিক কল্পনার পিছনে ছুটছে এরাই পথভ্রষ্ঠ। এদের মধ্যে কোন বাস্তবতা নেই। সেজন্য ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে পথ হারা এ মানবজাতিকে পথের সন্ধান দেওয়া একান্ত জরুরী।

 

বাস্তববাদী লেখক ও গবেষক: সরদার এম.এ মজিদ
পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা
মোবাইল নং- ০১৭২৩৯১২৭৪১।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/ডেক্স/


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক