ইসলাম মানে শান্তি: মুসলমানদের কেন অশান্তি !

প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০১৯ | আপডেট: ২:৫৭:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০১৯

ইসলাম মানে শান্তি, কিন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কেন অশান্তি? শান্তি মূলত অশান্তি দূর করার নাম। সেই অশান্তির কারণে মুসলমানরা আজ নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, ঘৃর্ণিত, অপমানিত। বর্তমান বিশ্বের মুসলমানরা অমুসলিমদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে যেমন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তেমনি নিজেদের সেই ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা বেমালুম ভূলে গেছে। মাত্র ১৪ শত বছরের ব্যবধানে দ্বীনের ধারক বাহক এদের মতভেদ ও মতবিরোধ এর কারণে সঠিক পথ ও মতের দিক নির্দেশনা না থাকায় দাওয়াতের কাজে নিস্প্রভ হয়ে পড়েছে। সর্বকালের বিশ্বজয়ী মুসলমান জাতির ইমান আমলের দূর্বলতা, কর্মে বিমুখিতা, জ্ঞানের স্বল্পতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের এক কলঙ্কময় ইতিহাস রচনা করে চলেছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

মুসলমানরা ভূলে গেছে নিজেদের সোনালী ইতিহাস, হারিয়ে ফেলেছে গেীরবময় ঐতিহ্য, খুয়ে ফেলেছে আকাশ ছোয়া হিম্মত, দৃঢ় চেতামন ও সতেজ ইমান। হতাশা আতঙ্কবিস্মৃতি আজ পুরা জাতিকে অবশ করে দিয়েছে। ইসলাম এসেছে তো মানব জাতির কল্যানের জন্য ও হেদায়েতের জন্য। মুসলমানদের মূল ধর্মগ্রন্থ হলো আল-কোরান। কোরান এসেছে বিশ্ব মানবজাতির পথ প্রদর্শক হিসাবে, মানুষের কল্যানের জন্য ও হেদায়েতের জন্য। যাহারা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করেছেন এবং এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে তাহারা মুসলমান। আর যাহারা ইসলাম গ্রহন করে নাই তাহারা অমুসলিম। অমুসলিমদের জান, মাল, ইজ্জত, আব্রুসহ সকল প্রকার নিরাপত্তার বিধান তো ইসলাম দিয়েছে। ইসলামে কোন সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ, দুর্নীতিবাদ, সুদ, ঘুষ, জেনা-ব্যাভিচার, খুন, জখম, অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি সহ সকল প্রকার নেশার দ্রব্য খাওয়া বা পান করা ইসলামে স্বীকৃতি দেয়নি। তাহলে বর্তমান বিশ্বে কেন মুসলমানরা আজ মার খাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, ঘৃনিত ও অপমানিত হচ্ছে। তাহলে আমরা কি শুধু মানুষ? আমাদের কি কোন হুস জ্ঞান নাই? ইসলাম ও মুসলমানদের যে আদর্শ থাকার কথা সেগুলি কি শুধু কোরান-হাদিসে সীমাবদ্ধ। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের আল্লাহর ভয় বলতে কিছুই নাই। যদি থাকত তাহলে পেপার পত্রিকায় অনৈতিক কার্য্যকলাপ প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হতো না, যাহা জাহিল্যাতের যুগকে হার মানিয়েছে।

আল্লাহ পাক কোরানে বলেছেন “তোমরা পরিপূর্নভাবে ইসলামে দাখিল হও”। তাহলে আমরা কি পরিপূর্নভাবে ইসলামে দাখিল হতে পেরেছি? কোরানুল কারিমে তিনি আরও বলেছেন “হে ইমানদারগণ তোমার আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলমান না হয়ে কবরে এসো না”। আমরা তো মুসলমান আছি, আমাদের পূর্বপুরুষরা মুসলমান ছিল তাহলে আল্লাহ পাক কেনো বলেছেন তোমরা মুসলমান না হয়ে কবরে এসো না? মুসলমান হতে গেলে উত্তম আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা, সৎ-চরিত্রবান; আমার জবানের দ্বারা, চলাফরা, কাজকর্ম, আচার ব্যবহার, লেনদেন এর দ্বারা অন্য কোন মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেই ব্যক্তি হলো মুসলমান। তাহলে আমরা পারতেছি না পূর্নাঙ্গ ইসলাম মানতে আর না পারছি পূর্নাঙ্গ মুসলমান হতে।

এই প্রসঙ্গে আমি একটি উদাহরণ না দিয়ে পারছি না- পাঠক কুলের কাছে শুধুমাত্র বোঝানোর জন্য বলা হলো। মনে করেন ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ মানুষ আর তার অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলি হলো মুসলমান। একটি মানুষের যদি কোন অঙ্গ প্রতঙ্গে ত্রুটি হয় তাহলে সেই মানুষটিকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। তাহলে ইসলাম কি আজ প্রতিবন্ধী? একজন প্রতিবন্ধী মানুষ তো নিজের ইচ্ছা খুশি মত নড়াচড়া বা চলাফেরা করতে পারেনা। সেই হিসাবে ইসলাম মনে হয় প্রতিবন্ধী ও বাকশক্তি রহিত হয়ে গেছে। কারণ তার নড়াচড়ারও কোন ক্ষমতা নাই। ইহুদী ও নাছারাদের চক্রান্তে আজ মুসলমানরা দিশেহারা-এরা খুব লোভী জাতি, স্বার্থের মোহে পড়ে যে যাকে যেভাবে বোঝাচ্ছে সে সেই কায়দায় বুঝে ইসলামের নিয়মনীতি আংশিক মানছে আর আংশিক মানছে না। যখন আংশিক মানছি তখনই আমরাও প্রতিবন্ধী। ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থা বর্তমানে প্রতিবন্ধীর মত। আর সেই কারণে বিশ্বের মুসলমানরা আজ নির্যাতিত এবং তাদের জঘন্য কর্মকান্ডের কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো যেমন ফিলিস্তিনে মার খাচ্ছে কারা- মুসলমানরা, ইসরাইলে মারা খাচ্ছে কারা- মুসলমানরা, ইরাকে মার খাচ্ছে কারা- মুসলমানরা, আফগানিস্থানে মার খাচ্ছে কারা- মুসলমানরা, মায়ানমারে মার খাচ্ছে কারা- মুসলমানরা, আল কায়দা কারা- মুসলমানরা, তালেবান কারা- মুসলমানরা, জেএমবি কারা- মুসলমানরা, ইসলামী নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতৃত্ব দেই কারা- মুসলমানরা, সন্ত্রাসী কারা- মুসলমানরা, জঙ্গীবাদ কারা-মুসলমানরা, দূর্নীতি করছে কারা-মুসলমানরা, খুন করছে কারা- মুসলমানরা, জেল খাটছে কারা- মুসলমানরা, ধর্ষন করছে কারা-মুসলমানরা, ফাঁসির কাষ্টে কারা- মুসলমানরা, ডাকাতি করছে কারা- মুসলমানরা, চুরি করছে কারা- মুসলমানরা, ছিনতার করছে কারা- মুসলমানরা, ভিক্ষা করছে কারা- মুসলমানরা, আর কত বলব বা লিখব, লিখতে গেলেও লজ্জাবোধ হচ্ছে। এই যদি হয় ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থা তাহলে আমি নি:সন্দেহে বলতে পারি ইসলাম ও মুসলমানরা বর্তমানে বাক প্রতিবন্ধী। ইসলাম যখন পৃথিবীতে এসেছিল তখন কতজন মুসলমান ছিল। আর এখন কতজন মুসলমান? উত্তম আখলাক, সৎ চরিত্রবান ও নীতি নৈতিকতার আদর্শ আজ ভূলুণ্ঠিত।

বেইমান ও মুনাফেকের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে ইসলাম ও মুসলমানদের সংখ্যা খুবই নগন্য। বর্তমান বিশ্বের মুসলমানরা তো সেই গৌরবমন্ডিত ইতিহাস ভূলে গেছে বললেই চলে। হতাশা ও হীনমন্যতা মুসলিম জাতি স্বত্তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছে এবং ইসলামের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যা মুসলমানদেরকে বিরাজমান বিপর্যস্ত পরিস্থিতিহৃত ঐতিহ্য পূনরুদ্ধারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে দাওয়াতের মাধ্যমে। যেমন মৌমাছি ফুলের নির্যাস টুকু আহরণ করায় সেইটুকু যেমন দামী, তেমনি আমরাও যদি কোরআন হাদিসের ঐ টুকু জ্ঞান অন্বেশ্বন করতাম তাহলে আমরাও ঐ রকম দামী হতে পারতাম। এহেন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের উচিত একমাত্র পথ ইসলামের পূর্নাঙ্গ আদর্শ মেনে চলা ও মুসলমানদের নীতি নৈতিকতার বিকাশ ঘটানো। মুসলমানদের জাতীয়তাবোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধ এর অটুট বন্ধনে এক্যবদ্ধ হতে পারলে এবং সকল প্রকার অনৈতিক কার্যকলাপ ও অপকর্মের পরিসমাপ্তি ঘটাইতে পারলে, দেশ ও জাতিকে গ্লানিমুক্ত করে পূর্নাঙ্গ ইসলাম ও আদর্শবান মুসলমান হতে পারলে বিশ্বের দরবারে মুসলমানরা পূনর্জীবিত ভাবে মাথা উচু করে দাড়াতে পারবে ইনশাল্লাহ।

বাস্তববাদী লেখক ও গবেষক : সরদার এম.এ মজিদ
পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা
মোবাইল নং- ০১৭২৩৯১২৭৪১


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক