ভালবাসার গল্প: “অতৃপ্ত ভালবাসা” (পর্ব-৩)

প্রকাশিত: ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২০ | আপডেট: ১২:৫৭:পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২০

জয়া: মামনি রোহিতের সাথে দেখা হয়েছিল।
মামনি: তারপর !
জয়া: ও খুব বাজে এবং পাজি। সবাইকে আগে থেকে আমার কথা বলছে।
জয়া কলেজের সব ঘটনা মামনিকে খুলে বলে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

মামনি: জয়া মা তুমি এখন বড় হয়েছো। এসব তোমার জীবনে ঘটবে। তবে মা সাবধানে পথ চলবে। কোন কিছু করার আগে খুব ভালো করে ভাববে।
জয়া: মামনি রোহিত কি আমাকে পছন্দ করে?
মামনি: তুমি করো?

 

জয়া: আমি সেটা জানি না, তবে ওর কথা শুনতে ওকে দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।
মামনি: দুদিনের পরিচয় মানুষকে চেনা যায় না। তবে রোহিত অনেক ভালো ছেলে।
এটা তোমার পাপা সব সময় বলে।
তবুও জীবনটা তোমার, তোমার জীবন নিয়ে তুমি ভালো করে ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নিবে।

এমন কিছু করবে না, যার জন্য তুমি কষ্ট পাও। পরিবারের মান-সম্মান চলে যায়।
জয়া: মামনি তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেন?
মামনি: তুমি আমার মা-তো তাই।
জয়া মামনি কে জড়িয়ে ধরে।

মামনি: রোহিতকে পেলে আমাকে ভুলে যাবি নাতো?
জয়া লজ্জা পেয়ে দৌড় দেয়।
জয়ার আম্মু: কি হলো দৌড়াচ্ছ কেন?
জয়া: এমনি।

আম্মু: চা খাবি না?
জয়া: জয় খেয়েছে?
আম্মু: জয় এখনো বাসায় ফেরেনি।
জয়া: জয় এলে একসাথে খাব।

রাতে খাবার টেবিলে জয়ার আব্বু বলে, “জয়া মা, কলেজ কেমন লাগলো?
জয়া: ভালো।
আব্বু: প্রথম থেকে ভালো করে পড়তে হবে। না হলে পরে কষ্ট হবে।
একসাথে অনেক বেশি পড়তে।

মামনি: ভাইয়া, জয়া ভালো করেই পড়ে। তবে জয় পড়ে না।
জয়: বড় আব্বু, পড়ি কিন্তু। মামনি মিথ্যা বলছে।
জয় এর আব্বু: রেজাল্ট দিলে বোঝা যাবে।
জয়: তাই হবে।
রাত বারোটা বাজে। জয়া রোহিতের কথা, কলেজের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়।

পরের দিন সকালে জয়া পাপার সাথে কলেজে যায়।
গেটে যেয়ে জয়া দেখে, পলি সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছে।
জয়া এগিয়ে যায় পলির দিকে।
পলি: চলো ছাদে যাই। সবাই ছাদে। তারা ছাদে যায়।

রাজ: জুলিয়েট, রাতে ঘুম হয়েছে?
জয়া: হবে না কেন?
তৃষা: রোমিওর হয়নি তো তাই। সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে।
জয়া: কাকুলি আসেনি?
সাথী: না।
রোহিত জয়ের দিকে তাকায়। জয়া আশার সাথে কথা বলে।

রোহিত: চল ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। এবার যাওয়া যাক। সবাই ক্লাসে যায়।
পরপর তিনটা ক্লাস শেষ করে ওরা ক্যান্টিনে যাই।
রাজ: আমি তোদের সবাইকে খাওয়াবো। তবে বিলটা জয়া দিবে।
রোহিত: জয়া কি জানে তুই এমন করবি? ওকি সাথে করে টাকা নিয়ে এসেছে?

 

তৃষা: কি ভালোবাসা !
আশা: ওরে বাবা!
পলি: এখনই এতো !
সাথী: সবই ভাগ্য !
জয়া লজ্জা পায়।
রোহিত: তো….রা……না।

 

রাজ: এখন তো আমরা কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হয়ে গেলাম।
জয়া: আমি এখনই টাকা দিচ্ছি।
খাওয়া শেষ করে ১২২০ টাকা বিল দিয়ে ওরা ক্যান্টিন থেকে বের হয়।
রোহিত রাজের কাছে একটা চকলেট দেয়। জয়াকে দেওয়ার জন্য।
রাজ সেটা খেয়ে ফেলে।

 

আশা: এবার কি?
জয়া: বাসা।
রাজ: বুকটা ফেটে যায়। সবাই হাসে।
তৃষা: ১টা বাজে চল বাসায় যায়।
সাথী: রোমিও হয়তো আরো কিছু সময় থাকতে চাইছে।
পলি: কিছু সময় না, সারাটা জীবন থাকলেও রোমিওর মন ভরবে না।
সবাই হাসে।

 

জয়া: এবার যেতে হবে।
আজ এতটা সময় এর মধ্যে রোহিত একবারও জয়ার সাথে কথা বলে না।
জয়ার মনটা যে কারণে খারাপ থাকে।
তৃষা: কাল কি বার?
পলি: শুক্রবার।

 

জয়া: তাতে কি?
সাথী: কলেজ বন্ধ।
আশা: কি কষ্ট!
জয়া: কিসের কষ্ট?
রাজ: না দেখার কষ্ট।
সবাই হেসে ওঠে।

রাজ: জয়া একা বাসায় যেতে পারবে?
জয়া: হ্যা।
রাজ: এটাই সুযোগ রোহিত কাজে লাগা।
সবাই আবার হাসে।
রোহিত: রাজ ভালো দেখে একজন রিক্সাওয়ালা ডেকে দে।

 

রাজ: রিক্সাওয়ালার কি দরকার? তুই রিক্সা চালাবি। জয়া বসে থাকবে।
তোর কপাল দিয়ে ঘাম পড়বে। জয়া ওড়না দিয়ে মুছে দিবে।
সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে। জয়া লজ্জা পায়, রোহিতও লজ্জা পায়।
জয়া: এবার যেতে হবে।
রাজ: রোহিত রিক্সা ডেকে দে।

জয়া: আমি একাই পারবো।
তৃষা: তাই কি হয়? রোমিও যে কান্না করবে।
রোহিত ও জয়া দুজনেই হাসে।
রোহিত রিকশা ডাকতে যায়।

 

রাজ: জয়া রোহিতকে তোমার কেমন লাগে?
জয়া: তোমাকে বলব কেন?
রাজ: যদি ভালো না লাগে, তবে আমি চান্স নিব তোমার সাথে।
জয়া হাসে।

রিক্সা আসে জয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
তবে রোহিতের সাথে কথা বলে না।
জয়া রিক্সায় উঠে। রিক্সা চলতে থাকে। জয়ার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।
নিজের অজান্তে তাঁর চোখে পানি চলে আসে।

 

জয়া ভাবে রোহিত কেন আজ তার সাথে কথা বললো না।
জয়া খুব নরম স্বভাবের মেয়ে। একটুতেই ভেঙ্গে পড়ে।
বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে জয়ের কোনো ধারণাই নেই।
পরিবারের বাইরে জয়া কখনো কারো সাথে মেশেনি।
কখনো কোন ছেলের দিকে তাকায়নি।

ছোটবেলা থেকে জয়া জানে, তার যেকোনো ব্যাপারে তার আব্বুর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
জয়ার বিয়ে তার আব্বুর পছন্দেই হবে।
তাই জয়া কখনো স্বপ্নও দেখিনি। কোন ছেলেকে নিয়েও ভাবেনি।
জয়ার এই পর্যন্ত কোন ছেলে বন্ধু ছিল না।

তবে এইচএসসি রেজাল্ট এর পরদিন তার আব্বু তাকে বলে, জয়া মা তুমি এখন বড় হয়েছো।
ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা তোমার হয়েছে।
একটু একটু করে মানুষের সাথে মিশতে থাকো।
জীবনে চলার পথে বন্ধু-বান্ধবীরাও প্রয়োজন আছে।

 

তবে কখনো এমন কিছু করবে না, যাতে করে আমার মান-সম্মান চলে যায়।
রিক্সা চলতে থাকে। জয়া মন খারাপ করে বসে থাকে।
হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন জুলিয়েট বলে ডেকে ওঠে।
জয়া সেদিকে তাকায়। রাজ ও রোহিত রিক্সায় করে আসে।

জয়া রিক্সা থামায়।
জয়া: কি হলো?
রোহিত: তোমার হাতটা দাও।
জয়া: তার ডান হাতটা রোহিতের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
রোহিত চারটা চকলেট দেয় জয়ার হাতে।

 

জয়া খুব আনন্দ পাই।
জয়া: চকলেট কেন? আমি কি পিচ্চি?
রাজ: পিচ্চি হবে তোমার আর রোহিতের বাচ্চা।
জয়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
রোহিত রাজ এর কান ধরে টান দেয়।

রোহিত: তোমার রিক্সা ভাড়াটা দিয়ে দিয়েছি।
জয়া: ঠিক হয়নি।
রাজ: এর থেকে ঠিক পৃথিবীতে আর কিছুই হয় না।
রোহিত: তুমি যেতে পারবে?
জয়া: পারব।

 

রাজ: কি ভালোই না হতো!
রোমিও-জুলিয়েট একই রিকশায়, টিপ টিপ বৃষ্টি, রিক্সার হুকটা উঠানো,
শান্তি আর শান্তি। জয়া ও রোহিত হাসে।
এভাবে মজা, আনন্দ আর ভালোলাগার স্রোতে ভাসতে ভাসতে সাতটা মাস কেটে যায়।

……………………………………

প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

তৃতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

চতুর্থ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

পঞ্চম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

শেষ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

……………………………………


আপনার মতামত লিখুন :

লেখিকা: নাজনীন