মশ্মিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দরজা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খোলা থাকলেও ভেতরে থাকেন না কেউ

প্রকাশিত: ৬:১৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২০ | আপডেট: ৬:১৯:অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২০

উত্তম চক্রবর্তী, মণিরামপুর(যশোর): যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের মশ্মিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দরজা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খোলা থাকলেও ভেতরে থাকেন না কেউ। একজন আয়া নিত্য হাসপাতালের গেট খোলেন আর বন্ধ করেন। তিনিও অফিস সময়ে হাসপাতাল ছেড়ে থাকেন পাশের ডাক্তারের কোয়াটারে। তিন বছর ধরে এই হাসপাতালে নেই কোন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো)। সেবা নিতে এসে কাউকে না পেয়ে এখানে এখন আর আসেন না কোন রোগী। সম্প্রতি সরেজমিন অফিস সময়ে মশ্মিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসক ও রোগী বিহীন ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। একই অবস্থা উপজেলার রাজগঞ্জের হরিহরনগর ও খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ কেন্দ্রের। এই কেন্দ্র দুটিতেও এফডব্লিউভি এবং সেকমো নেই দীর্ঘদিন। হরিহরনগর কেন্দ্রে রয়েছে একজন আয়া আর খেদাপাড়া কেন্দ্রে রয়েছে এক পিওন ও একজন আয়া। জরুরি মুহুত্বে আগত রোগীদের চিকিৎসা দেন তারা।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

মণিরামপুরে ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর ইউনিয়ন বাদে বাকি ১৬ টি ইউনিয়নে রয়েছে একটি করে স্বাস্থ্য কেন্দ্র। পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভবতী মায়ের সেবা, শিশু সেবা ও সাধারণ রোগীর সেবার লক্ষ নিয়ে গড়ে উঠেছে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো। সেবার জন্য প্রতি কেন্দ্রে একজন করে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক (এফউব্লিউভি) ও একজন করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) থাকার কথা। কিন্তু মশ্মিমনগর, হরিহরনগর ও খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ কেন্দ্রে এফডব্লিউভি ও সেকমো নেই। বাকি কেন্দ্রগুলোকে এফডব্লিউভি আছেন। তবে রোহিতা, কাশিমনগর, চালুয়াহাটি, নেহালপুর ও মনোহরপুর কেন্দ্রে সেকমো থাকলেও বাকি কেন্দ্রগুলোতে এই পদটি রয়েছে শূণ্য। এছাড়া কেন্দ্রগুলোতে গর্ভবতী নারীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নেই আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি, নেই পর্যাপ্ত ওষুধও। অন্য কেন্দ্রগুলোতে যারা আছেন তাদের অনেকেই নানা অজুহাতে ঠিকমত কর্মস্থলে হাজির থাকেন না বলে অভিযোগ। ফলে এসব কেন্দ্রে মানসম্মত সেবা মিলছে না রোগীদের।
মশ্মিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আয়া স্বপ্না খাতুন বলেন, এখানে অনেকদিন ধরে এফডব্লিউভি ও ডাক্তার নেই। সপ্তাহে মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিন চালুয়াহাটি কেন্দ্র থেকে এফডব্লিউভি নাছিমা আক্তার আসেন। আগে সবদিন রোগীরা আসত। এখন মঙ্গলবার ও বুধবার আসার জন্য সবাইকে বলে দেওয়া আছে। খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এফউব্লিউভি শ্রাবন্তী বিশ্বাস মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় হরিদাসকাটি কেন্দ্রের এফউব্লিউভি বিচিত্রা বিশ্বাস সপ্তাহে শনি ও বুধবার এই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন। সপ্তাহে দুইদিন খেদাপাড়া কেন্দ্রে তার বসার কথা থাকলেও নানা কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। ফলে সপ্তাহ জুড়ে এই কেন্দ্রে আয়া আর পিওন ছাড়া কারও দেখা মেলে না। খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিওন মাসুদ রানা বলেন, সপ্তাহে দুইদিন মেডাম আসেন। অন্যদিন রোগী আসলে জরুরি হলে ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করে আমরা ওষুধ দিই।
হেলাঞ্চি গ্রামের বৃদ্ধা জয়গুন বেগম বলেন, রোগ হলি এই হাসপাতালে আসি, ওষুধ নিই। ডাক্তার না পালি তহন কিনে খাই। মণিরামপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বলেন, মাঝে মধ্যে ওষুধের কিছু সমস্যা হয়। এখন পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। আর লোকবল কম থাকায় সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। আমি মিটিং-এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। নতুন করে কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। তারা কর্মস্থলে যোগদান করলে এই সমস্যাগুলো সমাধান হবে বলে আশা করি।

সুন্দরবনটাইমস.কম/নিজস্ব প্রতিবেদক


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক