খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রহ.) বাঙালী মুসলমানদের অহংকার: নলতা শরিফে উরসে বক্তরা

প্রকাশিত: ১১:৪৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০ | আপডেট: ১১:৪৮:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আলহাজ্ব খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রহ.) এর দর্শনের মূলকথা ছিল মানবতা। খান বাহাদুর আহছানউল্লা (রহ.) এর ৫৬ তম উরছে বক্তরা এ কথা বলেন। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংষ্কারক, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক ও মহান সূফী সাধক। তিনি বাঙালী মুসলমানদের অহংকার এবং তার কালের আলোকিত এক সূর্য্যস্নাত মহাপুরুষ।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

বক্তারা আরও বলেন-হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) ছিলেন আমাদের জন্য রোল মডেল। কারণ তিনি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অবিভক্ত বাংলায় শিক্ষা বিভাগের উধর্বতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ ও রাসূলের সকল আদেশ, নিষেধ অনুসরণ করে হয়েছেন পীরে কামেল। আমার জীবন ধারা, ভক্তের পত্রসহ অসংখ্য রচিত গ্রন্থে তিনি লিখেছেন ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের অমীয় কথা। মুসলিম রেঁনেসার অগ্রদূত হয়েও তিনি সব সময় অসা¤্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তার মত ও পথ ছিল আদর্শিক। তাই আমরা যদি পীর কেবলার লিখিত গ্রন্থাবলী ও বাস্তব জীবনে যে কর্মকান্ড করে গেছেন তার কিছুটা হলেও পালন করতে পারি তাহলে আমাদের জীবন অনেক সার্থক হবে।
হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) উরছ উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলার নলতা মোবারকনগরে পবিত্র জন্মভূমিতে ৫৬ তম পবিত্র ওরছ শরীফ আজ মঙ্গলবার সকালে আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। মোনাজাত পরিচালনা করবেন,নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্জ মাওলানা মোঃ আবু সাঈদ (রংপুরী)।

দুপুর থেকে বিকাল পযর্ন্ত মিশন অফিসের সামনে পুরুষের এবং নির্মাণাধীন আহ্ছানিয়া মিশন জামে মসজিদের স্থানে মহিলাদের জন্য ওরছ শরীফের মাঝের দিনের রান্না তাবারুক বিতরণের পর বিকালে পাক রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় মাহফিল অনুষ্ঠান।
এই উপলক্ষে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পীরভক্ত, মুরিদ ও ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা নলতায় উপস্থিত হয়েছেন। খ্যাতনামা আলেমগণ কোরআন ও হাদিসের আলোকে বক্তব্য রাখেন।
বাদ ফজর হতে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পাক রওজা শরীফে প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব আলহাজ্জ ডা. মো. খলিল উল্লাহ’র সভাপতিত্বে হজরত গফুর শাহ (র.) জীবনাদর্শ সম্পর্কে আলোচনা রাখেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক আলহাজ্জ ড.কাজী এহছানুর রহমান। কেনো দরবার শরীফে আসলাম সে সম্পর্কে আলোচনা রাখেন খানবাহাদুর আহছানউল্লা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক আলহাজ্জ এ এফ এম এনামুল হক। ভক্তের পত্র থেকে পাঠ করেন খানবাহাদুর আহছানউল্লা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। মুর্শিদী পাঠ করেন মো. আমিরুল ইসলাম, মো. কামরুল ইসলাম বাবলু ও মো. রবিউল ইসলাম। কোরআন খতম ও তাওয়াল্লাদ শরীফ পরিবেশন করেন হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান। কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মো. শাহাদাত হোসেন, কেয়াম পরিবেশন করেন হাফেজ মো. মনিরুল ইসলাম। শেজরা শরীফ পাঠ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন আলহাজ্জ হাফেজ মো. শামছুল হুদা। সকাল ৯.৪৫ হতে বেলা ১১টা পর্যন্ত মিশনের প্রাক্তন সভাপতি আলহাজ্জ মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহ’র সভাপতিত্বে বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করেন-আলহাজ্জ মাওলানা আশরাফুল ইসলাম আজিজী, আলহ্জ্জা হাফেজ মো. শামছুল হুদা, আলহাজ্জ মো. মুজিবর রহমান, মো. আনিছুর রহমান, মো. রবিউল ইসলাম ও মো. শাহীন আলম।
বাদ আছর হতে মাহফিল মাঠে যে সমস্ত প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরামগণ কোরআন ও হাদিছের আলোকে ওলি-আউলিয়াগণের জীবন দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করেন তা হলেন-হাফেজ মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ আশেকী (প্রাক্তন ইমাম, পোলায়ূপেনাং, মালয়েশিয়া; খতিব, আশকেনা জামে মসজিদ, উত্তরা, ঢাকা), আলহাজ্জ মাওলানা মিজানুর রহমান শাহপুরী (খতিব, টঙ্গী জামে মসজিদ, ভাষ্যকার-বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন), আলহাজ্জ মাওলানা মো: আবু সাঈদ, রংপুরী, মুফাস্সির ও মুহাদ্দিস, খতিব-নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদ), আলহাজ্জ হযরত মাওলানা আল্লামা মুফতী আব্দুল মজিদ (পিরিজপুরী, খতিব-হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় সুন্নী জামে মসজিদ, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক), আলহাজ্জ মাওলানা মো: আশরাফুল ইসলাম আজিজী- ইমাম, নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদ, নলতা শরীফ), মাওলানা মো. নূরুল ইসলাম (মুহাদ্দিস, কাজলা মাদ্রাসা), মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম (সহকারী অধ্যাপক, নলতা মাদ্রাসা), মাওলানা মো. রবিউল ইসলাম (উত্তরশ্রীপুর) প্রমূখ। বাদ আছর হতে রাত ৪.৪৫ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্বে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি আলহাজ্জ কাজী রফিকুল আলম, প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব আলহাজ্জ ডা. মো. খলিল উল্লাহ, নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্জ মাওলানা মো. আবু সাঈদ, আলহাজ্জ ডা. মো. আবুল কাশেম, আলহাজ্জ মো. মুনসুর আহমদ শিক্ষক ও হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান। বাদ আছর নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদে ৫৬ তম বার্ষিক ওরছ শরীফের সুবিধা-অসুবিধা ও আগামী ১৫ মার্চ ২০২০ মিশন প্রতিষ্ঠার ৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কর্মকর্তাদের সাথে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শাখা মিশন কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় আলহাজ্জ এ এফ এম এনামুল হক ও প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্জ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি।

নলতা শরীফে উপস্থিতি
সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলহাজ্জ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি’র সভাপতিত্বে (রাত ৯টা হতে ১১টা পর্যন্ত) আলহাজ্জ মুফতী মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক (খতিব, নিকেতন জামে মসজিদ, ঢাকা। চ্যানেল আই, মাছরাঙ্গা ও এটিএন এর ধর্মীয় আলোচক; উপাধ্যক্ষ-কাদেরিয়া তৈয়েবিয়া কামিল মাদ্রাসা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা),আলহাজ্জ মুফ্তি মুহাম্মদ নাজমুস সায়াদাত ফয়েজী (খতিব, মসজিদ-এ-বেলাল রাঃ), প্রভাষক, কাদেরিয়া তৈয়েবিয়া কামিল মাদ্রসা মোহাম্মদপুর, ঢাকা), আলহাজ্জ অধ্যাপক হাফেজ হাফিজুর রহমান ( খতিব, গুলশান-১ জামে মসজিদ, ঢাকা),মুফতী শাইখ মোহাম্মদ উসমান গনী (সহকারী অধ্যাপক, আহছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফীজম, ঢাকা), মুফতী মাওলানা মো: আলমগীর হুসাইন সাইফী (খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, হবিগঞ্জ), হাফেজ মাওলানা মো. কামরুজ্জমাান (পারুলিয়া),আলহাজ্জ মাওলানা অধ্যক্ষ শফিউল্লাহ হাবিবি, ক্বারী মো. শামছুর রহমান, হাফেজ মো. আবু সাঈদ, মো. ওবায়দুর রহমান, মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম প্রমূখ। বিকাল থেকে ভোর ৪.৪৫ পর্যন্ত আরো যে সমস্ত ব্যক্তিগণ সভাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করেন তারা হলেন- মিশনের প্রাক্তন সভাপতি আলহাজ্জ মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহ, প্রকৌশলী ড. কাজী আলী আজম, আলহাজ্জ ড. আবু তৈয়ব আবু আহমদ, আলহাজ্জ আবুল ফজল, আলহাজ্জ ডা. মো. আকবর হোসেন. হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান প্রমূখ।
পবিত্র ওরছ শরীফের দ্বিতীয় দিনে মাহফিলে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপির সভাপতিত্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ মনসুর আহমেদ, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ এর সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব কাজী রফিকুল আলম,কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের সহ সভাপতি আলহাজ্ব ড.কাজী আলী আজম,আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক,কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আলহাজ এনামুল হক খোকন, অর্থ সম্পাদক মো.আনাওরুল হকসহ কেন্দ্রীয় ও দেশ,বিদেশ থেকে আগত হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯ টার সময় আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে নলতা শরীফে ৫৬ তম বার্ষিক ওরছ শরীফের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালায় স্ব-বান্ধবে উপস্থিত হয়ে বার্ষিক ওরছ শরীফ সফল ও সার্থক করার জন্য উরস শরীফ উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক ও নলতা পাক রওজা শরীফের শ্রদ্ধেয় খাদেম আলহাজ্জ মৌলভী আনছার উদ্দিন আহমদ সকলকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এ দিকে শুরু থেকেই উরস প্রঙ্গন জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠের এক কোনায় ছিলে পুলিশ কন্ট্রলরুম। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি একটি স্পেশাল টিম। পুরা এলাকা জুড়ে চারপাশে একাধিক সিসি ক্যামেরা। তাছাড়া মাঠের চারপাশে বিভিন্ন বিকিকিনির সঙ্গে ছিল খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রহ.) এর জীবন ও কর্মের প্রদর্শনী। কিছু স্টলে তার রচনাবলির সঙ্গে উঠে আসে সে সময়কর বিভিন্ন দূর্ভল ছবির প্রদর্শণী। পাক রওজা শরীফের চতুর্দিকে নানা ফুলের শোভাবর্ধন ও নলতা শরীফ এলাকা দৃষ্টিনন্দন সজ্জিতকরণের জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে দীর্ঘ রাত অবধি ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের ভীড় বেড়েই চলেছে। নলতা শরীফে এখন বিরাজ করছে উৎসবমূখর পরিবেশ। ৩ দিন ব্যাপী ২৪ ঘন্টা সমগ্র অনুষ্ঠানটি ক্যাবল অপারেটর সাতক্ষীরা ভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য,খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রহ.) স্মরণে তারই প্রতিষ্টিত নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিবছর উরসের আয়োজন করা হয়।

সুন্দরবনটাইমস.কম/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক