কপিলমুনি কলেজের মেধাবী ছাত্রী পূজার আত্মহত্যার কারণ তাঁকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল!

প্রকাশিত: ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২০ | আপডেট: ১:২৯:পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, কপিলমুনি(খুলনা):
কপিলমুনি কলেজের মেধাবী ছাত্রী পূজা ঘোষ (২২) আত্মহত্যা রহস্য ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে। পারিবারিক সূত্র দাবি করছে, মায়ের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেন তিনি। কেউ বলছেন, কিছু দিন পূর্বে বাড়ি থেকে একটি স্বর্ণালংকার হারিয়ে যাওয়ায় পারিবারিক কলহে আত্মহত্যা করেন তিনি। আবার অনেকের দাবি, জনৈক ভিন্ন ধর্মাবলম্বী যুবককে ভালবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন পূজা। এসময় নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেফিট করে নাম বদল করে তামান্না পারভীন নাম দেওয়া হয় বলেও প্রচার রয়েছে। তবে বিষয়টি ক্রমান্বয়ে তার পরিবারের মধ্যে জানাজানি হওয়ায় শারিরীক ও মানষিক চাপে আতœহত্যায় বাধ্য হন তিনি। এমনকি মৃত্যুর দিন সকালে ঐ যুবকের সাথে মোবাইলে কথাও হয়েছে। কি কথা হয়েছিল তার সাথে? আর কেনইবা তড়িঘড়ি করে আত্মহত্যা করতে গেলেন পূজা? এর হিসাব মেলাতে পারছেনা কেউ।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কপিলমুনি কলেজের রাস্ট্রবিজ্ঞাণ বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন পুজা, রোল ৫০১। গত ২৩ নভেম্বর ১৯’ ফাইনাল বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণে টাকা কমানোর আবেদনসহ ফরম ফিলাপ করেন তিনি। গত ৩ সেমিস্টারে তার রেজাল্ট এ-গ্রেড। সর্বশেষ পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যার এত আগ্রহ, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে কি এমন ঘটনা ঘটল, যার কারণে আতœহত্যা করলো মেধাবী ছাত্রী পুজা?

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র দাবি করেছে, হুসাইন নামে এক ইসলাম ধর্মাবলম্বী যুবককে ভালবেসে সবার অজ্ঞাতে বিয়ে করেছিলেন তিনি। এর জন্য নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেফিট করে ধর্মান্তরিত করা হয় তাকে। প্রথমত বিষয়টি হুসাইনের পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলেও গোপন থাকে পূজার পরিবারে। তবে ক্রমান্বয়ে পূজার পরিবার ও তার স্বজনদের মধ্যে জানাজানি হলে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে চাপ দেয়া হয় পূজাকে। অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্যও ছেলে দেখা শুরু করেন তারা। তবে অনার্স পাশ করার পর পূজার বিয়ে করার আশ্বাসে কোন রকম চুপ থাকে তার পরিবার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে হুসাইনের সাথে পূজার সরব উপস্থিতির খবরে পূজার উপর নতুর করে চাপ বাড়তে থাকে। পরে স্বর্ণালংকারটি পাওয়া গেলেও পূজার ব্যবহৃত স্বর্ণের চেইনটি খুলে নেওয়া হয়। এতে ভীষণভাবে কষ্ঠ পান পূজা। এক রকম ভেঙ্গে পড়েন তিনি। এর উপর ঘটনার আগের রাতে ও ঘটনার দিন সকাল থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার বিষয়টিকে ইস্যু করে পূজাকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এরপর বেলা ১১ টার দিকে স্বজনরা তার নিথর দেহটি নিয়ে আসেন কপিলমুনিতে চিকিৎসা করাতে। প্রচার হয়, নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। প্রথমে ভ্যানে করে কপিলমুনির একটি ক্লিনিক, তারপর স্থানীয় ডাক্তার জিষ্ণুপদ মুখার্জীর চেম্বার ও সর্বশেষ কপিলমুনি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সঞ্জয় দাশ তাৎক্ষণিক কপিলমুনি হাসপাতালে উপস্থিত হলে আতœহত্যার কারণ ও কিভাবে আতœহত্যা করেছে জানতে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করলেও মৃতের এক মামা কাজল ছাড়া বিশেষ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এসময় দাবি করা হয়, নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আতœহত্যা করেন পূজা। তবে শরীর ভারী হওয়ায় ওড়না ছিঁড়ে নাকি নীচে পড়ে যান তিনি। তবে কারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন এবং কে বা কারা তাকে ঘরে দেখতে পান তার সদুত্তর দিতে পারেনি উপস্থিত স্বজনদের কেউ। এরপর লাশের ময়না তদন্ত না করে সৎকারের জন্য ব্যাপক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে থানায় একটি ইউডি মামলার পর এর তদন্তভার দেওয়া হয় কপিলমুনি ফাঁড়ির এসআই অভিজিৎ দাশকে।

এরপর লাশের সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে পাইকগাছা থানা ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য নেয়া হয়। পরের দিন দুপুর ২ টার পর ময়না তদন্ত শেষে লাশ সরাসরি মামুদকাটি শ্মশানে নিয়ে সৎকার সম্পন্ন হয়। ধারণা করা হচ্ছে গভীর তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে আত্মহত্যার প্রকৃত রহস্য, এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী।

এব্যাপারে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির এস আই অভিজিৎ দাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া না পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেননা তিনি।
পূজার বাবা মৃনাল ঘোষের সাথে যোযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত: ৩১ সিম্বের সকালে রহস্যজনক আত্মহত্যা করেন কপিলমুনির ভাড়াটিয়া ও পার্শ্ববর্তী হরিঢালী গ্রামের মৃনাল ঘোষের বড় মেয়ে ও কপিলমুনি কলেজের অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্রী পূজা ঘোষ। এদিকে পূজা আত্মহত্যার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও সঠিক কারণ চিহ্নিত করতে পারেনি প্রশাসন।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/এইচ এম এ হাশেম

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক