আসন্ন বাজেটে সাতক্ষীরার উন্নয়নে ২১ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা নাগরিক কমিটি

প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০১৯ | আপডেট: ৭:০৬:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০১৯

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:
আসন্ন বাজেটে সাতক্ষীরার উন্নয়নে ২১ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা নাগরিক কমিটি। শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিম।
এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর এপারের জেলাগুলোতেও উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। এ উন্নয়নের ছোয়া খুলনা-বাগেরহাট পর্যন্ত পৌঁছালেও বঞ্চিত হচ্ছে সাতক্ষীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০ লাখ মানুষের আবাসস্থল ছোট-বড় নদ-নদী দ্বারা বিধৌত অপার সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা জনশক্তি, আম, বনজ সম্পদ, মাছ, মাটির তৈরি টালি ইত্যাদি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও ভোমরা বন্দর থেকে জাতীয় রাজস্ব প্রদানে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। তারপরও এখানকার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটেনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাতক্ষীরার সার্বিক উন্নয়নে জেলা নাগরিক কমিটির নেতারা ২১ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি গুলো হলো-
২১ দফায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত মুন্সীগঞ্জ থেকে নাভারণ পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, একই সঙ্গে মংলা-খুলনা-সাতক্ষীরা পৃথক রেললাইন নির্মাণ, সাতক্ষীরায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের পার্শ্ববর্তী এলাকাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা, সুন্দরবনের সম্পদভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, ভোমরা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করা, অবিলম্বে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, সাতক্ষীরায় বেকার সমস্যা সমাধানে শ্রমঘন বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসকে আধুনিকায়ন করে চালু করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা কবলিত এ এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা, দুর্যোগের কারণে এ এলাকা থেকে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা করা, জেলার সব নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সব বাধা অপসারণ, ডিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, উদ্ধার করা জমি ইজারা না দেওয়া, অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ না করা, ইছামতি নদীর সঙ্গে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগ স্থাপনকারী কুলিয়ার লাবন্যবতি ও পারুলিয়ার সাপমারা খাল সংস্কার ও খনন করা এবং দু’পাশের স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালু করা, ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, নিচু বিলগুলো উঁচু করতে জোয়ারাধার (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ, সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ চালু করে বেতনা ও মরিচ্চাপের সঙ্গে সংযুক্ত করা, সরকারি রাস্তা ও নদীর বেড়িবাঁধকে ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার বে-আইনি ঘোষণা, নদী-খালের নেট-পাটা অপসারণ, সাতক্ষীরা পৌরসভার মাস্টার প্লান তৈরি, নতুন ভবন নির্মাণের সময় চলাচলের পর্যাপ্ত রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখা, শহরের সব রাস্তা প্রশস্ত করা, ফুটপাত রাখা, গুরুত্বপূর্ণস্থানে ওভারপাস নির্মাণ, প্রধান সড়কগুলো ডিভাইডার দিয়ে দুইলেন করা, ইটাগাছা হাট, পুরাতন সাতক্ষীরা হাট, কদমতলা হাট ও সাতক্ষীরা বড়বাজার প্রশস্ত ও নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করে আধুনিক হাট-বাজারে রূপান্তরিত করা, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক দখলমুক্ত ও মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করা, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সাতক্ষীরা পৌর অডিটোরিয়ামের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ও খেলার মাঠ স্থাপন, শহরে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ও শৌচাগার নির্মাণ, শহরে একাধিক হকার্স মার্কেট গড়ে তোলা, সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের মেডিকেল কলেজের অংশটি লিংকরোড হিসেবে চালু করে মূল বাইপাস সড়কটি আলিপুর চেকপোস্টে সংযুক্ত করা, জেলার চলাচলে অযোগ্য রাস্তাঘাট সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ, আশাশুনির সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাংশেও আরও একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ, ঢাকার সঙ্গে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমিয়ে আনতে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল-নওয়াপাড়া-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়ক নির্মাণ, চিংড়ি চাষের কারণে প্রান্তিক কৃষকের জমি হারানো রোধ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া, আম-কুলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কৃষি বাজার নির্মাণ, বিভিন্ন ফল, শাক-সবজি ও দুধ সংরক্ষণের জন্য উপজেলায় আধুনিক হিমাগার ও সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও কৃষিভিত্তিক ইকোভিলেজ মার্কেট স্থাপন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা চালু, জেলার বিভিন্ন ফিডার রোডে চলাচলরত হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের আধুনিকায়ন করা, স্থানীয়ভাবে এগুলো চলাচলের লাইসেন্স দেওয়া, জেলার সঙ্গে সব উপজেলার সরাসরি যাতায়াতের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, লবণাক্ত, আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, শহরে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনসহ সিটি সার্ভিস চালু করা, সাতক্ষীরায় বিমানের অফিসসহ যশোর বিমানবন্দরে যাতায়াতের জন্য বিমানের নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা চালু করা, জেলা সদর ও প্রত্যেক উপজেলা সদরে শিশুপার্ক নির্মাণ, সামগ্রিক উন্নয়ন অংশীদার জেলা হিসেবে সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু পানের আওতায় উপকূলীয় জেলা হিসেবে সাতক্ষীরাকে বিশেষ জেলা হিসেবে ঘোষণা এবং সাতক্ষীরার সব পুরাকীর্তি সংরক্ষণসহ মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, নিত্যনন্দ সরকার, আজাদ হোসেন বেলাল, আনোয়ার জাহিদ তপন, মাধব চন্দ্র দত্ত, আলী নূর খান বাবুল প্রমুখ।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/শা:/সাতক্ষীরা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক