কেশবপুরে বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলের সেচ প্রকল্প বন্ধ, অনাবাদি ২ হাজার হেক্টর জমি

প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২১ | আপডেট: ৬:৩৪:অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২১
যশোরের কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পলি অপসারণ কাজ পরিদর্শন করছেন।

যশোরের কেশবপুরে বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলের সেচ কার্যক্রম মাঝপথে বন্ধ হওয়ায় আসন্ন বোরো মৌসুমে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি আনাবাদি রয়ে গেছে বলে এলাকার কৃষকরা দাবি করেছে। এ সমস্যা নিরসনে এলাকার কৃষকরা দুইদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে ওই বিলের পানি নিষ্কাশনে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ডের জলকপাটের পলি অপসারণ কাজ চলিয়ে যাচ্ছেন। শ্রীহরি নদী ভরাটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

জানা গেছে, কেশবপুরের পূর্বাংশের বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলে ১ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। ঘেরের পানি নিষ্কাশন করে বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদের শর্তে এ সমস্ত জমিতে মৎস্য ব্যবসায়ীরা মাছের ঘের করেছেন। শ্রীহরি নদী ভরাটের কারণে চলতি বছর কেশবপুরের বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমীনকে আহবায়ক, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমানকে সদস্য সচিব ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমানকে কোষাধ্যক্ষ করে বিলের পানি নিষ্কাশন নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নামের ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৫ জানুয়ারী থেকে বিলখুকশিয়ার ওয়াপদা বেঁড়ি বাঁধের ওপর ১২৮ টি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প দিয়ে এ প্রকল্পের সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিল এলাকা জলাবদ্ধ রেখেই সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে কেশবপুরের ২ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হয়। এসব জমিতে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হতো। এতে কৃষকরা প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।
সুফলাকাটি ইউনিয়নের কৃষক কবীর হোসেন, ফেরদৌস মোড়ল, ওলিয়ার রহমান, আলাউদ্দিন গাজী, পরিমল সরকার, নিত্যরজ্ঞন দাস, পরিতোষ সরকারসহ একাধিক কৃষক জানান, বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য টাকা নেয়া হলেও সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এতে আমরা চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করতে পারিনি। ফলে আমরা কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এখন আমরা এলাকার কৃষকরা মিলে দুইদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে ওই বিলের পানি নিষ্কাশনে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ডের জলকপাটের পলি অপসারণ কাজ চলিয়ে যাচ্ছি। কতদিন লাগবে বলা যাচ্ছে না।

সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবদুল গফফার বলেন, কেশবপুরের বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলের পানি নিষ্কাশনে রশিদ ছাড়াই প্রায় কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ লোক দিয়ে টাকা আদায় করে নয়ছয় করেছেন। তিনি কমিটির কাছে সেচ প্রকল্পের আয় ব্যয়ের হিসেব দাখিল না করেই সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে সেচ প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ এসএম মুনজুর রহমান বলেন, বিলখুকশিয়া ও সাতাশ বিলের পানি নিষ্কাশনে ১২৮টি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১২৬টি চালু ছিল। এক মাসের অধিক সেচ কার্যক্রম চালাতে প্রায় ৮০ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। তার মধ্যে ঘের ব্যবসায়ী ও এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ৬২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছিল। অর্থাভাবে শেষ পর্যন্ত সেচ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। টাকা ছয়নয় করার প্রশ্নই আসে না।

উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুস সামাদ সরদার বলেন, পানি নিষ্কাশন কাজ মাঝপথে বন্ধ হওয়ায় এলাকার কৃষকরা গত দুইদিন থেকে ওই বিলের পানি নিষ্কাশনে শ্রীহরি নদীর ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ডের জলকপাটের দু’পাশের পলি স্বেচ্ছাশ্রমে অপসারণ কাজ চলিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম দিনেই জলকপাটের দুটি কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে দ্রুত বিলের পানি নামছে ফলে নদীর গভীরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ৬ মাস আগে খালটি খনন করা হলেও শ্রীহরি নদীতে ব্যাপকভাবে পলি জমছে। যে কারণে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পলিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভবদহ প্রকল্পের মধ্যে শ্রীহরি নদী অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর