কেশবপুরের জলাবদ্ধতার সমাধানকল্পে পানিসম্পদ মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২০ | আপডেট: ৪:১৪:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২০

যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহসহ তৎসংলগ্ন কেশবপুর অঞ্চলের টিআরএম কার্যক্রম চালু না থাকায় এলাকায় আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। হরি ও টেকা-মুক্তেশ্বরী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্বল্প বৃষ্টিপাতেও বসতি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভবদহ ও কেশবপুর অঞ্চলের জলাবদ্ধতার সমাধান কল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রোববার দুপুরে স্মারক লিপি প্রদান করেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম, কেশবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফ-উজ-জামান খান, সাধারণ স¤পাদক জয়দেব চক্রবর্ত্তী ও পানি কমিটির সদস্য অধ্যাপক হাসেম আলী ফকির।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

স্মারক লিপি সূত্রে জানা গেছে, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা ইস্যুটি বহুল আলোচিত জাতীয় পর্যায়ের একটি ইস্যু। সুদীর্ঘ ৩০-৩৫ বৎসর যাবৎ এ সমস্যাটি অব্যাহত আাছে। বতর্মানে ভবদহ অঞ্চল অতিক্রম করে সমস্যাটি নিম্নে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত অসহায় মানুষদের জীবন জীবিকায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নীচু বসতি এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ঐসব এলাকা থেকে ব্যাপকহারে মানুষ স্থানান্তরিত হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। খুকশিয়া বিলে ৭ বৎসর ধরে টিআরএম বাস্তবায়নের পর পরবর্তীতে বিল হিসাবে পাশ্ববর্তী কপালিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

 

কিন্তু জনগণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে উক্ত বিলে টিআরএম কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। জনগণের সাথে দ্বন্দ্ব সংঘাতের মূল কারণ খুকশিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে বিল অধিবাসীদের ভোগান্তি যার প্রভাব পড়ে বিল কপালিয়ার অধিবাসীদের উপর। কপালিয়া ও খুকশিয়া বিল পাশাপাশি দুটি বিল। কপালিয়া বিল অধিবাসীদের অনেকের জমি রয়েছে খুকশিয়া বিলে। বিভিন্ন ধরণের জটিলতার কারণে খুকশিয়া বিলের অধিকাংশ জমির মালিক সরকারের বরাদ্দকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করতে পারেনি। তাছাড়া বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় প্রতি বৎসর এলাকা প্লাবিত হওয়া, বিল ব্যবস্থাপনায় কর্তৃৃপক্ষের উদাসীনতা প্রভৃতি কারণে বিল অধিবাসীদের দীর্ঘ ৭ বৎসর যাবৎ চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হতে হয়েছে।

 

এতে পার্শ্ববতী বিল কপালিয়ার অধিবাসীদের মনে এ ধারণা তৃণমূল হয় যে, তাদেরকেও অনুরূপ ভোগান্তির শিকার হতে হবে। জনগণের এ ধরণের মনোভাবকে পুঁজি করে ঘের মালিকরা এবং রাজনৈতিক দলাদলিতে দ্বন্দ্ব সংঘাতের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত কপালিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে কপালিয়া বিল অধিবাসীদের মনোভাব টিআরএম বাস্তবায়নের অনুকূলে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান নথিপত্রে ২৪ নং পোল্ডারকে ভবদহ এবং তার সন্নিহিত এলাকাকে ভবদহ এলাকা হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে হরিশ্রী, টেকা-মুক্তেশ্বরী, আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদী। প্রশাসনিক দিক থেকে এলাকাটি যশোর জেলার সদর, মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর উপজেলা, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত। এলাকার আয়তন প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর, জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ এবং গ্রাম সংখ্যা ৪৯৫টি। চিহ্নিত এলাকার সকল নদীর পানি কাসিমপুর ত্রিমোহনায় মিলিত হয়ে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল নামে প্রবাহিত হয়ে বারআড়িয়া মোহনায় মিলিত হয়েছে।

 

বিগত ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যাচাই বাছাই কমিটির সভায় বিল কপালিয়ার জন্য প্রস্তাবিত টিআরএম কার্যক্রমকে বাদ দিয়ে ৬৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে এলাকার জনগণের কাছে ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের সামিল। জনগণ এতোদিন ধরে আশায় বুক বেঁধে আছে যে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়িত হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুস সালাম খান স্মারকলিপি প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর