কালিগঞ্জের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলটি পূণ:তদন্ত শুরু প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২১ | আপডেট: ৮:৩৩:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২১ ২০১২ সালের ৩১ মার্চ সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের ফতেপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা মিতা রানী বালার বসতবাড়ি লুটপাট শেষে পুড়িয়ে দেয়। ছবি: ৩১ মার্চ ২০১২। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর চাকদহে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে দৈনিক দৃষ্টিপাতে সংবাদ প্রকাশের জেরে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাটি ৯ বছর পর পুন:তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জিয়ারুল ইসলাম। গত ৫ জানুয়ারি শুনানী শেষে ৭ জানুয়ারি মামলাটির পুন:তদন্তের ওই আদেশ দেন আদালত। আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের কথাও আদেশে উল্লেখ করেছে আদালত। সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ কালীগঞ্জের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চস্ত ‘হুজুরে কেবালা’ গল্পের নাট্যরুপ মহানবী (সাঃ)কে কটুক্তি করা হয়েছে মর্মে একটি রিপোর্ট ২৯ মার্চ দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার প্রকাশিত হয়। উক্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর জেলাব্যাপি উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ৩০ মার্চ দুপুর একটার দিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও কয়েকটি নাশকতার মামলার আসামী নুরুজ্জামান পাড় শিক্ষক মিতা রানী বালাকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে তুলে এনে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রধান শিক্ষক রেজোয়ান হারুন ও ছাত্র সাঈদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন বিকেলে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি সদস্য জাফর সাফুইকে দিয়ে নাটক পরিচালনাকারি মীর শাহীনুর রহমানসহ সাতজনের নামে থানায় মামলা করান তৎকালিন কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিন। মহানবীকে কটুক্তি করার গুজবে কৃষ্ণনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ২০১৮ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মোশারফ হোসেন ও তৎকালিন কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান আনছারউদ্দিন (প্রয়াত) ও চৌমুহুনী ফাজিল মাদ্রাসার তৎকালিন সুপার আব্দুল কাদের হেলালীর নেতৃত্বে দু’টি মিছিল বের হয়। ৩১ মার্চ সকালে বের হওয়া উক্ত মিছিল থেকে ফতেপুর মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাংচুর করা হয়। এ সময় শাহীনুর মীর এর বাড়ি, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য আব্দুল হাকিম এর বাড়ি, শিক্ষিকা মিতা রানী বালা ও লক্ষীপদ মন্ডলের বাড়িসহ কয়েকজনের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফতেপুর সাংস্কৃতিক পরিষদ ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুণ দেওয়া হয়। লক্ষীপদ মন্ডল ও মিতা রানী বালার বাড়িতে দ্বিতীয় দফা অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দেন জাপা নেতা জুলফিকার সাফুই, তার ভাই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদি জাফর সাফুই, বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের নৈশ প্রহরী সামছুর রহমানের ছেলে জামায়ত ক্যাডার রবিউল ইসলাম। জেলে থাকা মিতা রানী বালার ছোট ছেলে অনির্বানকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে। ফতেপুরের সহিংসতার জের ধরে ২০১২ সালের পহেলা এপ্রিল একই উপজেলার চাকদহ গ্রামের কাপালিপাড়ায় আটটি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর করে তাদের সর্বস্ব পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে আগুণ লাগিয়ে দেওয়ার পর চাকদাহ গ্রামের এক হিন্দু গৃহবধু পালিয়ে বিচালী গাদার মধ্যে অবস্থান নিলে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর থেকে তার শাশুড়ি পাগল প্রায়। সহিংসতার সকল ঘটনায় ৫ এপ্রিল দায়েরকৃত চারটি মামলায় ৯৪ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা দু’হাজার ২০০ লোককে আসামী শ্রেণিভুক্ত করা হয়। কর্তব্যে অবহেলার দায়ে কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হককে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। ৮ এপ্রিল তৎকালিন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান ও কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১০ এপ্রিল তৎকালিন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের নির্দেশে দৃষ্টিপাত পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করা হয়। ১২ এপ্রিল অস্ত্রধারি শিবির ক্যাডার দৃষ্টিপাত পত্রিকার সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে গাজীপুর জেলা সদরের একটি ব্যাচেলার ছাত্রবাস থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৫ এপ্রিল তৎকালিন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান ও কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিনকে হাইকোর্টে তলব করা হয়। ঘটনার তদন্তে হাইকোর্ট একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১২ জুন অতিরিক্ত যুগ্ম সচিব একেএম জহরুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে তদন্ত করেন। কালীগঞ্জ থানার তৎকালীন তদন্ত ওসি আক্তারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই জাফর সাফুই এর দায়েরকৃত শিক্ষক, ছাত্র ও নাট্যকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় (জিআর-৭৯/১২ কালীগঞ্জ) আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদির নারাজির আবেদন খারিজ হলে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। ফতেপুর ও চাকদাহের ঘটনায় দায়েরকৃত তিনটি মামলায় ২০১৩ সালের শেষের দিকে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালিন পিপি ও বর্তমান সাংসদ এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ আদালতে না রাজির আবেদন দাখিল করেন। সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় জানান, দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পূণঃতদন্তে পাঠানো হয়েছে। সংবাদটি পড়া হয়েছে ২৬০ বার আপনার মতামত লিখুন : আরও পড়ুন কালীগঞ্জ থেকে ৪৪৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ দুই কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার কালিগঞ্জে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ