সাতক্ষীরা মেডিকেলে করোনা ছাড়া অন্য রোগি ভর্তি বন্ধ, জেলায় তৃতীয় দফায় লকডাউন

প্রকাশিত: ৯:০৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২১ | আপডেট: ৯:০৩:অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২১

সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় দিন দিন করোনা সংক্রমনে মৃত্যুর মিছিল ভারী হয়ে উঠায় জেলায় তৃতীয় দফায় আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে লকডাউন।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চূয়াল মিটিং এ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

শুক্রবার (১৮ জুন) রাত ১২টায় দ্বিতীয় দফার লকডাউন শেষ হওয়ার পর তৃতীয় দফার এই লকডাউন শুরু হবে এবং আগামী (২৫ জুন) রাত ১২ টায় শেষ হবে। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভারইরাসটির উপসর্গ নিয়ে জেলায় আজ পর্যন্ত মারা গেছের অন্ততঃ ২৫৫ জন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৫৫ জন। এছাড়া জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে ৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা সংক্রমনের হার ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এদিকে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া স্বাক্ষরিত এ চিঠি ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত বিষয়াট নিশ্চিত করে বলেন, জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা অতিথিরা করোনার সংক্রমণের হার কমাতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন। দীর্ঘ ১৩ দিন লক ডাউনের পরও জেলায় সংক্রমণের হার ৪৭ থেকে ৫৩ ভাগ হয়েছে। যা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ভার্চূয়াল এই মিটিং এ যুক্ত ছিলেন, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী আ.ফ.ম ড. রুহুল হক. সাতক্ষীরা-২ আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো.নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান,সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা, এন এস আইয়ের উপপরিচালক, সাত উপজেলা চেয়ারম্যান, সাতক্ষীরা ও কলারোয়া পৌর মেয়র ও সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।

আলোচনায়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিগেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরিত পত্র কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বলে জানান। করোনা প্রতিরোধে ওয়ার্ড পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গুলোকে সাথে নিয়ে নতুন করে গঠিত কমিটির কার্যকারিতাকে আরও জোরদার করার তাগিদ দেয়া হয়। এছাড়াও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্যান্য রোগি ভর্তি বন্ধ করে সদর হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অপারদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই সিদ্ধান্তে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানায়, করোনার চিকিৎসা করছেন মেডিসিনের চিকিৎসকরা। গাইনি, চক্ষু, দন্ত, অর্থপেডিক্সসহ অন্যান্য চিকিৎসকদের এক্ষেত্রে কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া মেডিকেলে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

সেক্ষেত্রে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে সম্পূর্ণ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হলে ছাত্র শিক্ষক চিকিৎসক সকলেই বিড়ম্বনায় পড়বেন। বিশেষ করে ছাত্ররা এ সময় অন্য কোন বিষয়ে শিখতে পারবেন না। করোনা চিকিৎসায় সাথে সংশ্লিষ্ঠ নন এমন চিকিৎসকদেরও কোন কাজ থাকবে না। তাছাড়া প্রতিদিন করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাতক্ষীরা মেডিকেলের একজন শিক্ষক বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেহ হাসপাতালের ৮তলা ভবনের দুটি বা তিনটি ফ্লোর করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে নিদিষ্ঠ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে এক বা একাধিক ভবনেও করা যেতে পারে। তার বাইরে কিছু করা হলে উপকারের চেয়ে অপকারই হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মূখপাত্র ডাঃ জয়ন্ত কুমার সরকার জানান, জেলায় মোট ৩২৬ জন করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন পজেটিভ ও ২৮৮ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। বাকীরা প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মূখপাত্র আরও বলেন, চলমান দুই সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের ১৩তম দিনেও নানা অজুহাতে মানুষ হাট বাজারে ভিড় করছেন। কোন ক্রমেই মানতে চাচ্ছেননা স্বস্থ্যবিধি। ইতিমধ্যে শহর ও গ্রাম অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে সর্দি, কাশি ও জ্বরসহ করোনার নানা উপসর্গ।

ডাঃ জয়ন্ত কুমার সরকার আরও বলেন, জেলার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভারাসটিতে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৭৯ জন। রুগীদের চাপ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, গেলো চব্বিশ ঘন্টায় ১০টি অফিযানে ৩০টি মামলায় ২৪ হাজার ৬ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

 

এসজি/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। ডেক্স