বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম আলাউদ্দীন ছিলেন সাতক্ষীরার উন্নয়নের পথিকৃত

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০১৯ | আপডেট: ৮:৫৭:অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০১৯

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

মো: মুজিবুর রহমান: বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা স.ম আলাউদ্দীন ছিলেন সাতক্ষীরার রূপকার। তিনি সাতক্ষীরার সার্বিক উন্নয়নে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন। অন্যায়কে কখন প্রশ্রয় দেননি। তিনি আজীবন গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। প্রথিমধ্যে ঘাতকের একটি তাজা বুলেট কেড়ে নিল সেই মানুষটিকে। আর নিভে গেল সাতক্ষীরার উন্নায়নের সেই জীবন প্রদ্বীপ। যার জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৯শে আগষ্ট। তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নে মিঠাবাড়ী গ্রামে তার বাড়ি। পিতা-মরহুম সৈয়দ আলী সরদার। স.ম আলাউদ্দীন ১৯৬২ সালে এস,এস,সি ১৯৬৪ এইচ,এস,সি এবং ১৯৬৭ সালে খুলনা বিএল কলেজ থেকে বিএ ও ১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। ১৯৬৭ সালের প্রথম দিকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। এবং পরবর্তীতে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তালা কলারোয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রাদেশিক সদস্য নির্বাচীত হন। এরপর কয়েক বার তালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সহ বিভিন্ন পদে অধিষ্টিত হন। বর্নাঢ্য রাজনৈতীক জীবনে একাধিক বার কারা বরণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তালার জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাগতার মধ্যে দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।

এরপর পাটকেলঘাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়েও তিনি কিছুদিন শিক্ষাগতা করেন। তিনি ছিলেন সমাজসেবক গরীব দুঃখি মেহনতী মানুষের অকৃতিম বন্ধু। মৃত্যুর ২বছর পূর্বে খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়কের কাপাসডাঙ্গা নামক স্থানে আলাউদ্দীন ফুডস্ এন্ড কেমিক্যাল নামক একটি বিস্কুট ফ্যাক্টারী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু পেশা ভিত্তিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন তালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ভোমরা স্থালবন্দর ব্যাবহারকারী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সভাপতি, ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি, সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্নয় কমিটির সভাপতি সহ অশংখ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার নিরপেক্ষ দৈনিক পত্রদূতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ১৯৯৬সালে ১৯শে জুন সাতক্ষীরার নিজ পত্রিকা অফিসে কর্মরত অবস্থায় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে আততায়ীর হাতে খুন হন। তিনি ছিলেন বাঙ্গালী জাতীয়তা বাদের প্রতিষ্ঠা, গণমানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার অকাল মৃত্যুতে সাতক্ষীরা বাসী অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমৃত্যু যা সবাইকে বহণ করে যেতে হবে। ১৯৯৬সাল থেকে ২০১০সময়ের ব্যাবধানে কেটেছে অনেক বছর আজও আলাউদ্দীন হত্যার বিচার হয়নি। “বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে” মরহুম আলাউদ্দীন ভাই যে দলের নেতা ছিলেন সেই দল সরকারে থাকা অবস্থায় তিনি খুন হন। তিনি শুধু রাজনৈতীক নেতা ও সমাজ কর্মী নন তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিকও। দীর্ঘ ২৩বছর সাংবাদিক সমাজ এই ঘৃনিত বরবর হত্যার বিচার দাবী করে মাঠে রয়েছে।

স.ম আলাউদ্দীন ঘুরে বেড়িয়েছেন শহর থেকে গ্রাম কখনো মটর সাইকেল, আবার কখনও পায়ে হেটে। সাধারন মানুষের কথা তিনি শুনেছেন কারোর অভাব, আভিযোগের কথা গুলো তিনি ভাল ভাবে শুনতেন মাটি ও মানুষের সাথে তার ছিল নিবিড় সম্পর্ক। এই মানুষটির মৃত্যুতে আজ তারা শোকাহত মর্মাহত আজও সাতক্ষীরা তথা তালার পাটকেলঘাটা হাজার হাজার মানুষ স.ম আলাউদ্দীনের কথা স্বরণ করে। আলাউদ্দীন ভাইকে কে বা কারা হত্যা করেছিল সাতক্ষীরায় এটা কারও অজানা নয়। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে মামলাটি। খুনি চক্র কেন এই জনপ্রিয় মানুষটিকে খুন করেছিল বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট। দীর্ঘ ২৩ বছরেও এ হত্যা কান্ডের বিচার হয়নি। সাতক্ষীরা মানুষের কাছে তিনি আজও সাতক্ষীরার রূপকার হিসাবে চিরস্বরণীয় হয়ে আছেন। আজও মানুষ তার কথা স্বরণ করে। কবর জিয়ারত করে। ফেলে আসা দিন গুলো মনে করে স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি ছিলেন অকুতো ভয়। নিজের জীবনকে বাজী রেখে তিনি দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্বরণ করি এই মানুষটিকে। কামনা করি তার রূহের মাগফিরাত।

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/ডেক্স রিপোর্ট/মো: মুজিবর রহমান




আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক