তিন মেয়ের নিরাপত্তায় রাতে বাড়ি পাহারাদার বসিয়েছেন কৃষক

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০ | আপডেট: ৮:৪৩:অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০
যশোরের মণিরামপুরে স্কুল কলেজ পড়ুয়া তিন মেয়ের নিরাপত্তায় রাতে বাড়িতে পাহারাদার নিযুক্ত করেছেন শেখ মাহাবুর রহমান নামে এক কৃষক। অভিযোগ করা হচ্ছে, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আপন ভাই ও ভাইপোদের হামলার ভয়ে তিনি বাড়িতে এই পাহারাদার বসিয়েছেন। গত দুই মাস ধরে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশসহ স্থানীয় মাতবরদের দরজায় ঘুরে কোন প্রতিকার পাননি তিনি। ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে এই কৃষকের। 
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি উপজেলার শেখপাড়া রোহিতা গ্রামের। মাহাবুর শেখ ওই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ শেখের ছেলে। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই মুজিবর রহমান মাহাবুরের আপন ভাই।
 
মাহাবুর শেখ অভিযোগ করেন, ২৩ বছর আগে তিনি মায়ের কাছ থেকে তিন শতক জমি কেনেন। কিন্তু হঠাৎ মায়ের মৃত্যু হওয়ায় তিনি জমিটি নিজের নামে দলিল করাতে পারেননি। এরপর ছয় ভাই বোনের মধ্যে পাঁচজন মাহাবুরকে সেই জমি ছেড়ে দেন। কিন্তু তার সেজো ভাই মুজিবর রহমান (মুইজে) জমির দাবি ছাড়েননি। অবশেষে তিনি (মুজিবর) নিজের অংশ বুঝে নেন। এরপর মাহাবুর তার অংশে ইটের ঘর তোলেন। এক পর্যায়ে মুজিবর তার ছেলে মেহেদী হাসেনের নামে গোপনে মাহাবুরের ঘরভিটার অংশ থেকে তিন শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এই নিয়ে মুজিবর ও মাহাবুরের দ্বন্দ্ব। যার জের ধরে দুইমাস আগে সংঘর্ষে দুই পক্ষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই সময় মুজিবরের করা মামলায় মাহাবুর জেল খাটেন।
মাহাবুর বলেন, জেল থেকে আসার পর আমার পরিবারকে নানাধরনের হুমকি দিয়ে আসছে মুজিবর ও তার তিন ছেলে সোহাগ হোসেন, মেহেদী হাসান ও জাহিদ হাসান। আমি স্ত্রী সুফিয়া খাতুন এবং তিন মেয়েকে সোনিয়া (একাদশ শ্রণি), মনিরা (৮ম) ও রিয়া (২য়) নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাদের ভয়ে দিনে রাতে আমার মেয়েরা বাইরে বেরুতে পারে না। ঘরের জানলা দরজা ভাল না। রাতে ঘুমোতে পারিনা, জেগে থাকতে হয়। যে কোন সময় আমার মেয়েদের ওপর হামলা হতে পারে। এমন কি এসিড নিক্ষেপ করতে পারে ওরা। সেই ভয়ে মাসিক দেড় হাজার টাকা বেতনে মদন শেখ নামে একজনকে রাতে পাহারাদার নিয়োগ করেছি। দেড় মাস ধরে সে ডিউটি করছে। যে দিন পাহারাদার আসে না সেই দিন সবাইকে নিয়ে জেগে থাকতে হয়।
বিষয়টি নিয়ে বহুবার থানায় এবং স্থানীয় মাতবরদের কাছে গিয়েছি। কেউ সমাধান করে দেয়নি। কয়দিন আগে থানা থেকে পুলিশ এসে সব জেনেশুনে স্থানীয় মাতবর শেখ রাসেদকে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি আজ না কাল করে শুধু দিন দিচ্ছেন।
এদিকে রোববার (১২ জুলাই) রাতে সরেজমিন গিয়ে মাহাবুরের বাড়িতে পাহাদারকে দায়িত্বরত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
প্রহরী মদন শেখ বলেন, মারামারির পর থেকে মাহাবুরের পরিবারের ভিতর ভয় ঢুকেছে। তাই তারা আমাকে দেড়হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে রেখেছেন। আমি সন্ধ্যার পর আসি সকালে লোকজন ঘুম থেকে উঠলে চলে যাই।
অভিযুক্ত মুজিবর শেখ বলেন, জমি নিয়ে আমাদের বিরোধ। সেই বিরোধ নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলে মেহেদীকে মাহাবুর ও তার মেয়েরা মেরেছে। তাই নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। আমার ছেলেরা বাইরে কাজে গেছে। আমরা কাউকে হুমকি দিচ্ছিনে।
স্থানীয় চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ রাসেদ হোসেন বলেন, মাহাবুর বাড়িতে পাহারাদার রেখেছে কিনা জানি না। আমরা মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিকেলে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে বসব। 
মণিরামপুর থানার এসআই খান আব্দুর রহমান বলেন, জমি নিয়ে মূলত মাহাবুর ও তার ভাইয়ের বিরোধ। জমির সমস্যা মিটলে সব সমাধান হয়ে যাবে। আমি সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রাসেদকে সমাধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। সে যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটা আমাদের জানাতে বলেছি। 
মাহাবুরের বাড়িতে নৈশপ্রহরী রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই আব্দুর রহমান বলেন, ওটা মাহাবুরের মনের দুর্বলতা।

আপনার মতামত লিখুন :

উত্তম চক্রবর্তী। নিজস্ব প্রতিবেদক। মণিরামপুর, যশোর