জমে উঠেছে সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী ৩শ বছরের গুড়পুকুর মেলা

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০১৯ | আপডেট: ৮:৫৪:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুর মেলা। মেলাটি ৩০০ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। মেলায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠছে। মেলায় আসছে সব বয়সের মানুষ। নারী ও শিশুদের উপস্থিতি বেশি। ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ মেলা চলবে মাস ব্যাপী। মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সাতক্ষীরার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, প্রতি বাংলা বছরের শেষ ভাদ্রে (পুরোনো পঞ্জিকা অনুযায়ী) হিন্দুসম্প্রদায়ের মনসাপূজা উপলক্ষে সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে গুড়পুকুরের মেলা। শহরের পলাশপোল স্কুলের উত্তর-পশ্চিম কোণের বটতলায় হয় ওই পূজা। এই পূজাকে কেন্দ্র করেই ৩০০ বছরের আগে থেকে এ মেলা বসে আসছে। মেলাকে কেন্দ্র করে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সাতক্ষীরাবাসীর মিলনমেলায় পরিণত হয়ে ওঠে। আগে মেলা চলত অন্তত এক মাস ধরে। সারা দেশের ব্যবসায়ী ছাড়াও ভারতের কলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতেন এ মেলায়।

মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে দোকান সাজিয়েছেন। গ্রামীন সংস্কৃতির নানা উপকরণে মেলার সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। মেলায় নাগরদোলা ও ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক নৌকায় শিশুদের বিনোদন সকলের নজর কাড়ছে। এছাড়া গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পশরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় করে শুরু হলে ও গুড় পুকুরে মেলায় সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। এখানে সাতক্ষীরাসহ আশেপাশের জেলা থেকে ও গুড় পুকুরের মেলায় দর্শণার্থী এবং ক্রেতারা আসেন। এরমধ্যে নারী শিশু দর্শণার্থীর সংখ্যা বেশি। মেলায় রকমারি সব জিনিসপত্রের সমাহার যা সহজে মানুষকে আকর্ষণ করে। এরমধ্যে শিশুদের খেলনাসহ মহিলাদের মনোহরি সামগ্রীর সমাহার চোখে পড়ার মতো।

তবে সাতক্ষীরা ঐতিহ্যবার্হী গুড় পুকুরের মেলায় এক সময়ে যে সুনাম ছিল। তা আজ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। কিছু দুষ্কৃতি মানুষের কারণে মেলার সে ঐতিহ্য আজ আর নেই বলে জানান দর্শণার্থীরা।

তালা উপজেলার শ্রীমন্তকাটি গ্রামের আলিফ রহমান বলেন, তাঁরা প্রতিবছর মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। শিশুদের খেলনা সামগ্রী অনেক কম দামে কেনা যায়। পাওয়া যায় সব ধরনের জিনিসপত্র।

ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান,১৯ সেপ্টেম্বর মেলা শুরু পর থেকে বৃষ্টিতে এক সপ্তাহ মেলা জমেনি। দুই-তিন দিন আগে মেলা জমতে শুরু হয়েছে। মেলার সময় ১৫ দিন, কিন্তু তা বাড়িয়ে এক মাস করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান,সাতক্ষীরা, তথা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেলা শুরু করা হয়েছে। তবে এবার ডেঙ্গুর কারণে মেলা এক মাসের স্থলে ১৫ দিন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেলায় যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, এ জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য,২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মেলায় বোমা হামলা চালানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা রকসি সিনেমা হলে ও সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের দ্য লায়ন সার্কাস প্যান্ডেলে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা হামলা চালানো হয়। ওই বোমা হামলায় দুজন ছাত্র ও একজন নারী চিকিৎসক নিহত হন। এ সময় আহত হয় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। এরপর মেলা বসলেও ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার পর মেলা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে স্থানীয় মানুষের দাবির মুখে ছোট কলেবরে মেলাটি আবার চালু হয়।

 

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/শা:গো:/সাতক্ষীরা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক