কৃষিবান্ধব উভয়চর প্রাণী ব্যাঙ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম: সংরক্ষণ প্রয়োজন

প্রকাশিত: ৯:১১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৯ | আপডেট: ৯:১৩:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৯



সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

মো. আমিনুর রহমান সোহাগ:
বাংলাদেশে পরিবেশগত এবং উপযোগী জলাশয় থাকার কারণে পৃথিবীর অন্যতম জীব-বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ দেশ বলে পরিচিত। দেশের কৃষিতে গুরত্বপূর্ণ একটি উভয়চর প্রাণী ব্যাঙ। কৃষিবান্ধব পরিবেশের জন্য ইহা অত্যান্ত উপকারী। কৃষকদের অদক্ষতা ও সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তাদের দায়ীত্বহীনতার কারণে সর্বত্র এলাকা থেকে ব্যাঙ হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।


বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ব্যাঙ জলে ও স্থলে বাস করে। সে কারণে এদের বলা হয় উভয়চর প্রাণী। সোনা ব্যাঙ, কুনো ব্যাঙ এবং গেছো ব্যাঙ সহ কয়েক প্রজাতির অসংখ্য ব্যাঙের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, কাঁকড়ার খাবার ও নির্বিচারে আহরণ, সংরক্ষন ও চাষ কৌশল উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এগিয়ে না আসার কারণে এলাকা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন উভয়চর প্রাণী ব্যাঙ। ব্যাঙ ফসল ক্ষেতের বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের অনেক উপকার করে। যে কারণে অধিক পরিমাণে কীটনাশকের বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন হতো না। কৃষি জমিতে ব্যাঙ মলমূত্র ও দেহাবশেষ পঁচে মাটির উর্বরতা শক্তি এবং ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শস্য ক্ষেতের ঘাস ফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং, বাদামী গাছ ফড়িং, পামরী পোকা এবং হলুদ মাজরা পোকা খেয়ে উপকার করে থাকে। মশা ও ছোট ছোট ক্ষতিকর জীবন্ত জীব খেয়ে জনজীবনের উপকার করে। পোকা-মাকড়ের আক্রমনের কারণে ফসলের উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পায়। ফলে হাজার হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলে পোকামাকড় আক্রমন থেকে রক্ষা করার ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে এবং মাটির উর্বরতা শক্তি বহুগুণে হ্রাস পায়। আর মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে ব্যাঙের বংশবৃদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটছে এবং বাসস্থানকে বিষাক্ত করে তুলছে। ইহার প্রভাব পড়ছে সম্পূর্ণভাবে পরিবেশের উপর। মশা ও ফসলের অনিষ্টকারী কীটপতঙ্গসহ বিভিন্ন প্রকারের পোকামাকড়ের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যে কারণে একদিকে যেমন ফসলের দারুণভাবে ক্ষতি হচ্ছে অপরদিকে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়াই বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে খাল-বিল, নদী-নালা এবং পুকুর জলাশয়ে জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ। কয়েক বছর পূর্বে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাঙের মধ্যে সোনা ব্যাঙের প্রক্রিয়াজাতকৃত পিছনের পা অনেক দেশে রপ্তানি হতো। ফলে অতিদ্রুত সোনা ব্যাঙ বিলুপ্ত হতে থাকে বলে জানা যায়। এখানে রপ্তানীযোগ্য প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া পাওয়া যায়। ইহা আহরণের জন্য উৎকৃষ্ট পন্থা ব্যাঙ টোপ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই সরকারি-বেসরকারিভাবে কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে লবণ পানির চিংড়ী চাষে বিকল্পপন্থা অবলম্বন, কাঁকড়ার বিকল্প খাবার ব্যাবহার করে, ব্যাঙ নিধন বন্ধ করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকলকে ব্যাঙের গুরত্ব ও উপকারীতা সম্পর্কে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে উভয়চর প্রাণী ব্যাঙ রক্ষা করা যেতে পারে বলে সকলের ধারণা।



আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক