আধুনিক সরঞ্জামের ব্যপক ব্যবহার: হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাঁসা-পিতলের তৈরি সামগ্রী ॥

প্রকাশিত: ১:৩২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৯ | আপডেট: ১০:২৪:অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০১৯

মো. আমিনুর রহমান সোহাগ:

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সর্বত্র অঞ্চলের সকল মানুষের কাছে এক সময় ব্যবহার হত ঐতিহ্যবাহী কাঁসা-পিতলের তৈরি সামগ্রী। সময়ের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ও আধুনিকতার ছোয়ায়, মূল্য বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি হারিয়ে যাবার উপক্রম কাঁসা-পিতলের তৈরি সামগ্রী। তদাস্থলে আধুনিক সরঞ্জাম সহ প্লাস্টিক, স্টিল ও মেলামাইন সামগ্রীর ব্যবহার ব্যাপক। তবুও বংশপরস্পরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্রের ব্যবহার লক্ষণীয়।


সরেজমিনে এবং বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমে জানা গেছে, শত শত বছর ধরে এক সময় সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা সহ উপজেলা নয়, গ্রাম বাংলার প্রত্যান্তঞ্চলের সর্ব সাধারণ থালা-বাসন, কলস, জগ, বদনা ও গৃহস্থলির নানা কাজে ব্যবহার হত কাঁসা-পিতলের তৈরি সামগ্রী। এমনকি জমিদাররাও ব্যবহার করত এ ধরণের তৈজসপত্র। বিভিন্ন ধরনের সৌখিন সামগ্রী হিসেবে সকলের গৃহে শোভা পেত কাঁসা-পিতলের তৈরি মনোমুগ্ধকর সামগ্রী। এমনি করে সকলের কাছে ইহার যথেষ্ট কদর ছিল।
বর্তমানে মেলামাইন, এ্যালুমিনিয়াম, কাঁচের তৈরি এবং প্লাস্টিক সামগ্রী সহজলভ্যতা ও মূল্য তুলনামূলক কম এবং বিভিন্ন রংয়ের বাহারী ডিজাইন, সময়ের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ও আধুনিকতার সরঞ্জামের ব্যবহার এতটাই সুবিধাজনক যে, কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র ব্যবহার সবাই ছেড়ে দিচ্ছে। মেলামাইন, প্লাস্টিক, সিরামিকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে ইহা হার মানতে বসেছে। বিগত কয়েক বছর পূর্বেও কাঁসা-পিতলের প্লেট, জগ, বদনা সহ নানাবিধ ব্যবহার করত মানুষ প্রতিনিয়ত। কিন্তু সেখানে আজ হাতে গোনা কয়েকটি সৌখিন শিল্পকর্ম আমাদের গৃহে শোভা পাচ্ছে। এমনি করে যত দিন যাচ্ছে তত দেশের প্রায় সর্বত্র কাঁসা-পিতলের তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার কমে যাচ্ছে। তবুও হিন্দু সম্প্রদায় বংশপরস্পরায় পূজা এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে কন্যাকে কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র দিয়ে থাকে।


পাটকেলঘাটা থানা সদর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কয়েক বছরে কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিসের মূল্য অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় নিত্য ব্যবহৃত অন্য জিনিসের মূল্য বাড়েনি। মেলামাইন, প্লাস্টিক, কাঁচের তৈরি বাহারী ডিজাইনের তৈজসপত্র খুব কম মূল্যে সহজে পাওযা যায়, যাহা কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিসের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তবে দাম যতই বৃদ্ধি পাক হিন্দু সম্প্রদায় বংশপরস্পরায় এখনো বিয়ে এবং বিভিন্ন পূজার সময় কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করে থাকে। একটি কলসের মূল্য ১৩শ-১৬শ, বদনা ৫শ-৮শ, থালা-বাসন ২শ-১৫শ, বাটি ৫শ-৭শ, ল্যাম্প বাতি ৮শ-১২শ, পানের বাটা ১শ ৫০-২শ, চামচ ও খুনতি ২শ-৩শ, গ্লাস ১শ৫০-২শ এবং জগ ৪শ-৬শ টাকায় বিক্রয় হয়ে থাকে বলে তার জানায়।
পাটকেলঘাটা থানার সদরের মোঃ শহিদুল ইসলাম(৭০), শাঁকদাহ গ্রামের স্বদেশ দাশ(৪৫), শ্রী বরুণ কুমার পাল(৫০), থানা সদরের সৈয়দ শহিদুল ইসলাম(৫৫), মিঠাবাড়ী গ্রামের আনোয়ার আলী(৬০), রুহুল আমীন(৬০), কুমিরার প্রতাপ কুমার(৪৫) সহ কয়েক জন জানায়, প্লাস্টিক, স্টিল এবং মেলামাইন সামগ্রীর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়তেই আছে। কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন সহজে বহন সুবিধা, দামও হাতের নাগালে। কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিসের মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। সে জন্য কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে খুব সহজে কম মূল্যে বাজারে স্টিল, প্লাস্টিক ও কাঁচের তৈরি জিনিসের প্রতি ঝুঁকছে। এখন কাঁসা-পিতলের ব্যবহার নেই বললেও চলে। তবে এখনো সর্বত্র হিন্দু সম্প্রদায় বংশ পরস্পরায় বিয়ের অনুষ্ঠানে কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিস দিয়ে থাকে।


পাটকেলঘাটা থানা সদরে কাঁসা-পিতলের পুরাতন তৈজসপত্র পরিষ্কারক ও মেরামতকারী যশোর জেলার কেশবপুর থানার মধুসূদন অধিকারীর পুত্র বিশ্বজিৎ অধিকারী(৩২) বলেন, আমি বংশপরস্পরায় ২০বছর এই কাজের সাথে জড়িত। ৫-৭ বছর পূর্বে আমরা তিন বাপ-বেটা এর কাজ করে পারতাম না। কিন্তু কাঁসা- পিতলের চাহিদা এখন আর নেই বললেই চলে। সপ্তাহে এখানে এক থেকে দুই দিন কাজ করতে আসি। বাকি দিন গুলি বাড়ির জমিতে কাজ করে ও আমার বড় ভাই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করে আমাদের ৯ সদস্যের পরিবার কোন রোকমে চলে যায়। আমাদের মত অনেকেই এ পেশা ছেড়ে রাজমিস্ত্রী ফেরিওয়ালা সহ বিভিন্ন কাজ করে তাদের জীবন চালায়।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক