অবশেষে জীবন যুদ্ধে হেরে গেল সাতক্ষীরার তালার গৃহবধূ নমিতা: ৩ দিন পড়ে রয়েছে নিথর মরদেহ

প্রকাশিত: ৭:৪০ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৯ | আপডেট: ৭:৪০:অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৯

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে বিরোধীতার জের হিসেবে শ্লীলতাহানি ও মারপিটের ঘটনায় গুরুতর আহত তালার মেশেরডাঙ্গা এলাকার কার্ত্তিক ব্যানার্জির স্ত্রী নমিতা ব্যানার্জি। ৩ বছর চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন গৃহবধু নমিতা। এদিকে মামলা জটিলতায় ময়নাতদন্ত ও সৎকার ছাড়াই শুক্রবার থেকে বাড়িতেই তার লাশটি পড়ে রয়েছে। মারপিঠের ঘটনায় ২০১৬ সালে ২৪ মার্চ কার্ত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যানার্জি বাদী হয়ে নিমাই পদ সানাকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত পরিচয় আরো ১৫/২০ জনের নামে তালা থানায় একটি মামলা করেন। যার নং-১২/১৬। গত ৩ বছরে মামলা খড়গের পাশাপাশি তার চিকিৎসায় নি:স্বপ্রায় পরিবারটি অন্তিম সময়ে অন্তত তার লাশের সৎকারের অনুমতি ভীক্ষা করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। এবিষয় স্থানীয় প্রশাসন বলছে আইনী জটিলতায় লাশের সৎকারে অপেক্ষা করতে হবে রবিবার আদালতের অনুমতি নেওয়া পর্যন্ত।
মামলার অভিযোগে জানাগেছে, ২০১৬ সালের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ১ নং মেশার ডাঙ্গা ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করেছিলেন কুলপোতা গ্রামের মৃত করুনাময় সানার ছেলে নিমাই পদ সানা। নির্বাচনে সেবার তিনি বিজয়ী হলেও মেশেরডাঙ্গার মৃত প্রফুল্ল্য বানার্জির ছেলে কার্ত্তিকসহ পরিবারের অন্যান্যরা অপর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিল। বিপত্তিটা সেখানেই। নির্বাচনের পরের দিন ২৩ মার্চ দুপুরে নিমাই সানার নেতৃত্বে তার ভাই শিব পদসহ সত্যজিৎ মন্ডল, অভিজিৎ মন্ডল, প্রদীপ সরকার, কামনাশীষ মন্ডল, সুভাশীষ সরকার, বিশ্বদেব ব্যানার্জিসহ ৩৫/৪০ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল দা, শাবল, কুড়াল ও লাঠি সোটা নিয়ে বাড়ির ঘেরা-বেড়া ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। কার্ত্তিককে না পেয়ে তার স্ত্রী নমিতা ব্যানার্জি(৪০) কে শাবল দিয়ে পিটিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। এসময় তারা মধ্যযুগীয় স্টাইলে নমিতার পরনের শাড়ী-কাপড় ছিড়ে মাটিতে ফেলে পাড়িয়ে গুরুতর আহত করে। তার আতœচিৎকারে কার্ত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যানার্জি ও নমিতার মেয়ে মুক্তি ব্যানর্জি(১৫) ঘটনাস্থলে পৌছে তাদের রক্ষার চেষ্টা করলে তারা তাদেরকেও মারপিট ও শ্লীলতাহানি ঘটায়। একপর্যায়ে দূবৃত্তরা বাড়িতে লুটপাট শুরু করে। এসময় তারা বাড়ি ঘর ভাংচুর করে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন, মুক্তির গলায় থাকা ১২ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, ঘরের ভেতর থাকা ড্রয়ার ভেঙ্গে নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট করে নেয়। এসময় তাদের আতœচিৎকারে প্রতিবেশী স্বপন কুমার সরকার,ধিমান ব্যার্জি,ষষ্ঠী রাণী ব্যানার্জিসহ অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে তারা তাদেও প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে তালা ও পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
ঘটনায় পরের দিন ২৪ মার্চ কার্ত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যানার্জি বাদী হয়ে নিমাই পদ সানাকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত পরিচয় আরো ১৫/২০ জনের নামে তালা থানায় একটি মামলা করেন। যার নং-১২/১৬। ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৫৪/৪২৭/৩৭৯ ও ৫০৬। মামলায় পুলিশ আসামীদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করে।
এদিকে আহত নমিতার অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৪ দফায় ভারতে ও সর্বশেষ ভারত থেকে এনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সর্বশেষ ৯ মে তাকে সেখান থেকে বেঁচে থাকার সকল আশা ছেড়ে দেওয়ার পর মেশেরডাঙ্গা বাড়ীতে নিলে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ মামলা জটিলতায় এখন পর্যন্ত নিহতের লাশ তাদের বাড়ীতেই পড়ে রয়েছে। লাশের ময়না তদন্ত কিংবা সৎকারের ন্যুনতম অনুমতি পর্যন্ত দিতে পারছেনা লোকাল প্রশাসন। আদালতের অনুমতি ছাড়া লাশের সৎকারের ব্যবস্থা করতে না পারায় প্রশাসনও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।
এব্যাপারে মামলার প্রধান আসামী স্থানীয় ইউপি সদস্য নিমাই পদ সানার নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের লাশের বাড়িতে যাওয়ার কৈফিয়ৎ তলব করে এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে হুমকি প্রদান করেন।
তালা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, নমিতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু নিহতের পরিবারের দাবী ২০১৬ সাথে মারামারির ঘটনায় তিনি ৩ বছর চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেছেন। এঘটনায় মামলাও হয়েছিলো। তার মৃত্যুকে যদি মামলার সাথে সংশ্লিষ্ঠ করে তাহলে আদালতের অনুমতি লাগবে। আরও আদালত আমাদের যে ভাবে বলবে সেভাবে করা হবে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নমিতার নিথর দেহটি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মেশেরডাঙ্গা বাড়িতেই পড়ে ছিল।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/শা:/সাতক্ষীরা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক