সাতক্ষীরায় কিছুতেই কমছেনা করোনা সংক্রমণ, হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসক ও নার্স সংকট

প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২১ | আপডেট: ৬:৫৮:অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২১

সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় রোববার (১৩ জুন) দ্বিতীয় সপ্তাহের বিধি নিষেধের দ্বিতীয় দিনেও কিছুতেই কমছেনা করোনা সংক্রমণ। এরই মধ্যে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে আরো প্রকট হয়ে উঠেছে হাসপাতাল গুলো।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তির সংখ্যাও। ভাইরাসটির পরীক্ষার জন্য বেশী বেশী র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের দাবি তুলেছেন সচেতন মহল।

 

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবত সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমনের হার ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ উঠানামা করছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৮১ জনের নমুনা পরিক্ষা শেষে ৫২ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। যা সংক্রমনের হার ৬৪ দশমিক ২০ শতাংশ।

 

তিনি আরও বলেন, এনিয়ে, জেলায় আজ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ২৫৬ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় দুই জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও ৫ জন উপসর্গে মারা গেছেন। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ৫০ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরো অন্ততঃ ২৪৪ জন।

তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, করোনা সংক্রমনের বৃদ্ধির মধ্যেও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। সীমিত সংখ্যক জনবলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।

 

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার অপর্ণা রাণী পাল বলেন, জেলায় অস্বাভাবিক হারে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সীমিত জনবলে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, তাদের ওখানে ১৬৫ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৫০ জন।

 

নার্সিং সুপারভাইজার অপর্ণা রাণী পাল আরও বলেন, বর্তমানে ডিউটি করছেন ৯৫ জন। এর মধ্যে ৯ জন আবার করোনা পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অচিরেই নার্স নিয়োগ না দিলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

 

নাগরিক আনোদলন মঞ্চ সাতক্ষীরার সাধারন সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, জেলায় যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ছড়িয়ে পড়েছে এতে করে ভাইরাসটির পরীক্ষার জন্য জেলায় ব্যাপক হারে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রয়োজন।

 

তিনি আরো জানান, একই চিকিৎসক ও নার্স একদিকে যেমন করোনা রুগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। অপরদিকে তারাই আবার সাধারন রুগীদেরও চিকিৎসা দিচ্ছেন বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ও তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে। এর ফলে করোনা সংক্রমনের ঝুকি আরোও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ন অধ্যাপক আনিসুর রহিম বলেন, শুধু শহরের মনুষকে সচেতন করলে হবে না। গ্রামের মানুষকে বেশি বেশি সচেতন করাতে হবে। এলাকায় এলাকায় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার আহবান জানান এই নাগরিক নেতা।

 

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকার বলেন, জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রুগী রয়েছেন ৬৪৭ জন। এর মধ্যে ৫৭ জন দুটি সরকারী হাসপাতালে ও ৫৯০ জন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩১ জন। এ মধ্যে অনেকেই আছেন অসুস্থ্য। অচিরেই চিকিৎসক নিয়োগ না দিলে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে বলে তিনি আরো জানান।

তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন, করোনা রুগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালটিতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রুগীদের জন্য বেডের সংখ্যা ৮৭ থেকে বাড়াতে বাড়াতে ১৩৫ টি করলেও এতে সংকুলান হচ্ছেনা। ফলে আরো ১৫টি বেড বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এই তত্ত্বাবধায়ক।

 

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, করোনা সংক্রমনরোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

 

বিজিবি সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্নেল মোহাম্মদ আল-মাহমুদ বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে যাতে ভারতে অবৈধ ভাবে কেউ যাতায়াত করতে না পারেন। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমন প্রতিরোধে সীমান্তে বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় একই পরিবারের জনকে আটক করা হয়েছে।

অধিনায়ক লে: কর্নেল মোহাম্মদ আল-মাহমুদ আরও বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরে ভারতীয় চালক ও হেলপাররা যাতে খোলামেলা ঘুরে বেড়াতে না পারেন সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় সপ্তাহের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে প্রশাসন। জরুরি সেবা ব্যতিত সব দোকানপাট, মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ রয়েছে। সাতক্ষীরার সাথে যশোর ও খুলনাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের পয়েন্ট গুলিতে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়েছে।

 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম মোস্তফা কামাল জানান, লকডাউনের মধ্যে দোকানপাট খোলা রাখা, স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ বিভিন্ন অপরাধে জেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। গত চব্বিশ ঘন্টায় ভ্রাম্যমান আদালত ১২ টি অভিযান পরিচালনা করে ৭১ টি মামলায় ৭৬ হাজার দুইশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

 

এসজি/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। ডেক্স