সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আজু, বাবু, রবিউল ও জজ হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়েছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন

প্রকাশিত: ৭:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৯ | আপডেট: ৭:১০:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা:
২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের ভয়ংকর সহিংসতার শিকার কলারোয়ার মেহেদি হাসান জজ, মাহবুবুর রহমান বাবু, রবিউল ইসলাম ও আরিজুল ইসলাম আজু হত্যার আসামিদের রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন। তিনি এসব মামলার আসামিদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় যেয়ে তাদের জামিন করিয়েছেন। এখন তিনি বিচার বাধাগ্রস্থ করে চলেছেন।
শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম লাল্টুর অনুসারী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক স.ম মোরশেদ আলি ওরফে ভিপি মোরশেদ। তিনি আরও বলেন, ফিরোজ আহমেদ স্বপন দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে নানা ধরনের অপকর্ম করছেন। এখন তার শ্যালক মনিরুজ্জামান বুলবুলকে তার খেয়ালখুশী মতো উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ফায়দা লুটবার চেষ্টায় রয়েছেন।
এ সময় তার সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক জেলা সদস্য সাজেদুর রহমান খান চেীধুরী, যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমজাদ হোসেন ও রবিউল আলম রবি, লাঙ্গলঝাড়া ইউপি সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম, ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ পারভিন পুতুলসহ অসংখ্য দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন, নিহত জজের ভাতিজা আবদুস সালাম, নিহত রবিউল ইসলামের বাবা মুজিবর রহমান ও নিহত মাহবুবুর রহমান বাবুর ভাই আমানুল্লাহ আমান। তারা এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে তাদের স্বজন হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, ফিরোজ আহমেদ স্বপন আসামিদের পক্ষ নিয়ে বিচার বাধাগ্রস্থ করছেন।
ভিপি মোরশেদ বলেন, ২০১৫ এর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে ফিরোজ আহমেদ স্বপন সরাসরি নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তার প্রতিনিধি হিসাবে আরাফাত হোসেনকে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়ে তার কুঅভিসন্ধি বাস্তবায়ন করেন।
এ নির্বাচনে জিতে যাওয়া বিএনপির আক্তারুল ইসলাম কয়েকটি মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামি হওয়ায় তাকে সাসপেন্ড করিয়ে স্বপন তার শ্যালক মনিরুজ্জামান বুলবুলকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র বানিয়ে ফায়দা লুটতে শুরু করেন। এই সুযোগে বুলবুলকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে পৌরসভার মাস্টার রোলে তিন ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। এমনকি অসহায় পরিবারের সদস্য তামিম হোসেনকে পৌরসভা থেকে বিতাড়িত করে অবৈধভাবে পাকা প্রাচীর নির্মান করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, অন্যের রুটি রুজি মেরে ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনিরুজ্জামান বুলবুল একদিকে কয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যদিকে, কলারোয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এখন আবার তিনি স্বপনের আসকারা পেয়ে নিজেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিতে শুরু করেছেন। একইভাবে কে.এল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম একই ব্যক্তি হয়েও সরকারি কোষাগার থেকে বিভিন্ন পদ পদবীর বিপরীতে বেতন ভাতা ও সম্মানী উত্তোলন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় এসব কারণে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের মুখে গত উপজেলা নির্বাচনে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের রক্ষায় উপজেলা সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম লাল্টু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে বাধ্য হন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় গঠনতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী এসব অভিযোগ দলীয় ফোরামে তুলে ফিরোজ আহমেদ স্বপনের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গত ২২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আহবানে ‘দুর্নীতি বিরোধী সমাবেশ ও র‌্যালি’ দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. আবদুল জব্বারের সভাপতিত্বে ও সাবেক সাংসদ বিএম নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতে কলারোয়ায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব ও উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বক্তব্য রাখেন। এতে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ ,তাঁতী লীগ, সৈনিক লীগের উপজেলা নেতা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অথচ দুর্নীতি বিরোধী এই বিশাল কর্মসূচিকে ভিন্নভাবে কালার করে বিতর্কিত করার জন্য স্বপনের মদদে বিভ্রন্তিকরভাবে প্রচার করা হয়েছে। এমনকি মনগড়া ঘরলুকানো এক সংবাদ সম্মেলনে ফিরোজ আহমেদের শ্যালক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মনিরুজ্জামান বুলবুল নিজেকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক পরিচয় দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ এখন পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লালটু বহাল রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভিপি মোরশেদ, অধ্যাপক আবুল কালাম , ভুট্টোলাল গাইন, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বিভিন্ন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রতীক পেলেও ফিরোজ আহমেদ স্বপন তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকাকে পরাজিত করতে সহায়তা করেছিলেন। এমনকি তাদের কর্মী সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানিও করেছেন। প্রকৃত পক্ষে ফিরোজ আহমেদ স্বপন প্রধান মন্ত্রীর গাড়ী বহরের হামলা মামলার আসামী ও ২০১৩/২০১৪ সালে জামায়াতি সহিংসতায় নিহত কলারোয়ার আজু, বাবু, রবিউল, জজ আলি হত্যাকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে দলীয় সহকর্মীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছেন। তিনি তাদের বিচার বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব বিষয়ে তারা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
এ ব্যাপারে কলারোয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন বলেন,মেহেদি হাসান জজ,মাহবুবুর রহমান বাবু,রবিউল ইসলাম ও আরিজুল ইসলাম আজু হত্যার আসামিদের রক্ষা বিষয়টি একদম মিথ্যা কথা। আমার প্রতিপক্ষরা আজু, বাবু, রবিউল ও জজ হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে ভিন্ন নাটক শুরু করেছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

 

সুন্দরবনটাইমস.কম/শা:গো:/সাতক্ষীরা


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক