ডুমুরিয়ার কাঁঠালতলা আবাসন প্রকল্পের বাবলু দাস ও গীতা রানী দাসের জীবনের গল্প

প্রকাশিত: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২২ | আপডেট: ১১:৩৩:পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২২
ডুমুরিয়ার কাঁঠালতলা আবাসন প্রকল্পে স্বামীর সাথে ঝুড়ি বুনার কাজে সহযোগিতা করছে গীতা রানী দাস।

গীতা রানী দাস, বয়স ত্রিশের কোটায়। চারপাশে রঙিন জীবন দেখেছেন, সেই জীবনকে স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখাই ছিল যেন দুঃসাহস। ছিন্নমূল জীবনে কিভাবে দু’মুঠো অন্নাহার করে রৌদ, বৃষ্টি, ঝড় থেকে বেঁচে থাকার যুদ্ধে স্বামী বাবলু দাস (৪০) এবং তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে টিকে থাকবেন তা ভেবেই হয়ে যেতেন দিশেহারা।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

চুকনগর এলাকায় রাস্তার পাশে তালপাতার ছাউনির একটি ঝুপড়ি ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস ছিলো গীতা রানীর। এরপর বস্তির মতো একটি ভাড়া বাসায় দিনমজুর স্বামীর কামানো টাকা দিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যদিয়েও চলেছে তাদের সংসার। অর্থের অভাবে সন্তানদের স্কুলেও পাঠাতে পারেননি। এতটাই কঠিন দুঃসহ জীবন ছিল তার। স্থায়ী মাথা গোজার ঠায় কখনও পাবেন এমনটা স্বপ্নের কল্পনা করেননি তিনি।

 

জীবন যে কখনো কখনো কল্পনাকে হার মানায়, তেমনই স্মরনীয় একটি দিন এলো গীতা রানী দাসের জীবনে। ২০২১ সালে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা আশ্রয়ন প্রকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২ শতক জমির উপর নির্মিত সেমি-পাকা ঘর পেলেন অমূল্য উপহার হিসেবে। যে জমিরই মূল্য কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা, যা ক্রয়ের সাধ্য তার কখনোই ছিল না। চোখে তার নতুন স্বপ্ন, মনে খুশির জোয়ার। জীবনে অনেক কেঁদেছেন, এই প্রথম আনন্দে অশ্রু নামল তার দু’চোখ বেয়ে।

 

সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে এক হওয়া ১০৫টি পরিবার যেন একে অপরের আত্মার-আত্মীয় হয়ে গেছেন। গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে বেশ সখ্যতা। এছাড়া প্রতিটি ঘরের নারীরা পালন করছেন হাঁস-মুরগী। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় মাচা করে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি লাগিয়েছেন। দুই একজন গরু-ছাগলও পালন করছেন। তাদের জন্য পাশে একটি বড় পুকুর করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সেখানে তারা মাছ চাষ করছেন।

 

গীতা রানী দাস বলেন, চুকনগর বাজারে দীর্ঘ বছর যাবত এখানে সেখানে খুব কষ্টে বসবাস ছিলো তাদের। স্বামীর উপার্জিত অর্থের অভাবে বাসা ভাড়ার টাকা দিতে পারতাম না কোন কোন মাসে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়ি দিয়েছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। এখন আমরা আগের চেয়ে খুব ভালো আছি।

 

সুড়ঙ্গের শেষে যে আলো থাকে, তা যে কত দীপ্তিময় হয়ে উঠে তা বোঝা যায় গীতা রানী’র বদলে যাওয়া সময় দেখে। তার স্বামী বাবলু দাস ঝুড়ি, ডালা ও খাঁচা তৈরি করেন এবং সেগুলো কাঁঠালতলা বাজারে বিক্রি করেন। গীতা রানী সংসারের কাজের পাশাপাশি স্বামীর কাজে করেন সর্বাত্মক সহযোগিতা। স্বামীর আয় ও নিজের কাজকর্মে যে রোজগার হয় তাতে চুকে গেছে তাদের অভাব অনাটন। সন্তান পড়াশোনা করছে পাশের স্কুলে। স্বচ্ছল ও নিরাপদ জীবন চলার পথ সুগম করার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এবং তাঁর দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করেন। দুঃস্বপ্ন, পরনির্ভরশীলতা গীতা রানী হয়ে উঠেছেন একজন স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী ও সুখী মানুষ। এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দীন বলেন, আবাসন প্রকল্পের প্রতিটি পরিবার যেন পরনির্ভরশীল না হয়ে নিজে উর্পাজন করে সংসার চালাতে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।


আপনার মতামত লিখুন :

গাজী আব্দুল কুদ্দুস। নিজস্ব প্রতিবেদক। চুকনগর, খুলনা