তালায় প্রবল বৃষ্টিতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতিসাধন

প্রবল বৃষ্টির কারনে সাতক্ষীরার তালার বিভিন্ন প্রান্তে বোরো চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শুক্রবার (১ এপ্রিল) দুপুর ২ টা থেকে টানা প্রায় দেড় ঘন্টার প্রবল বর্ষনে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে বোরো ধান। গত বছরের তুলনায় ধানের দাম এবারও বৃদ্বি হয়নি। এনিয়েও রয়েছে কৃষকদের মধ্যে হতাশা। এরমধ্যে বছরের শুরুতে করোনার আঘাত। মার্চ থেকে সারা দেশে চলছে লকডাউন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষক ধান কাটতে মাঠে নামছে। শুধু তার নিজের জন্য নয়, দেশের সব মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই তাদের এই প্রচেষ্টা ।
ইতোমধ্যে এক-দেড় সপ্তাহ আগে থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখনও কমপক্ষে আরও ১৫ দিন লাগবে ধান ঘরে তুলতে। এরমধ্যে প্রতিদিনই কম বেশি বৃষ্টি প্রকট লেগেছিল। তবে সে বৃষ্টিতে ধানের তেমন কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু আজকের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান ।
মাঠে পড়ে রয়েছে কাটা ধান, কেউ কেউ ধান ঘরে তুলতে পারলেও অধিকাংশ কৃষকের ধান এখনও মাঠে পড়ে আছে। একদিকে করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনের সমস্যা, তারই মাঝে প্রকৃতিক দূর্যোগ। যার তান্ডবে দিশাহারা কৃষকরা। মাঠে ফসল দেখে আশায় বুক বেধেছিল অনেকেই। আজ প্রায় দেড় ঘন্টার প্রবল বর্ষনে ব্যপক ক্ষতিসাধন হল ধান চাষীদের। তালা, খলিষখালী, ধলবাড়িয়া, তৈলকুপি, জুজখোলা, আমতলাডাঙ্গা, খেরশা সহ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত কৃষকদের।
উপজেলার কয়েকজন কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, এমনিতেই দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গৃহবন্দি হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তার উপর অতিবৃষ্টি। আমাদের হাতে তেমন অর্থও নেই। এবার বোরো ধানের ফলন ভালই হয়েছিল কিন্তু বৃষ্টির কারনে সে আশার আজ নিভে যাচ্ছে প্রায় । এখন সরকার যদি আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে আমাদের কষ্টটা কিছুটা লাঘব হবে।
সরেজমিনে গিয়ে রাঘবকাটী গ্রামের কৃষক শফিকুল মোল্যা সাথে কথা বললে তিনি সুন্দরবনটাইমস.কম কে জানান, আমি ভ্যান চালিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালাই । অনেক কষ্টে বোরো ধান চাষ করছিলাম ১ বিঘা। ধান কেটে বাধাও হয়ে গিয়েছিল ভাবছিলাম শুক্রবার বিকালে সব ধান তুলব। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারনে আর ধান তোলা হলনা। প্রায় সব ধান ভিজে গেছে। আমি এখন বড় ক্ষতির সম্মুখীন হলাম ।
দুধলী গ্রামের চাষী আনিত্য সরকার বলেন, আমি ৫ বিঘা বোরো ধান চাষ করছিলাম। ১ বিঘা ধান ঘরে তুলতে পারছি। বাকি ৪ বিঘা ধান জমিতে। কিন্তু আজ বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে সব শুকনা ধান ভিজে গেছে। এখন যদি আগামীকাল রৌদ্র বের না হয় আমার ধান সব শেষ হয়ে যাবে।
বিষয়টা নিয়ে খলিষখালী ইউনিয়ন কৃষি উপ-সহকারী মোঃ শাহাবুদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি সুন্দরবনটাইমস.কম কে জানান, এরবছর খলিষখালীতে ১৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের আবাদ হয়েছিল। ফলনও ভাল ছিল । আমাদের লক্ষমাত্রাও পূরন হয়ছিল। ধান কাটা থেকেই বৃষ্টি চলেছ, কিন্তু তাতে কৃষকের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি । তবে আজ বৃষ্টিতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। এ বৃষ্টির ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে কৃষকরা চরম বিপর্জয়ে পড়ে যাবে। এতে গবাদী পশুর খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে।