সাতক্ষীরায় একই পরিবারের চারজনকে হত্যা মামলায় আপন ছোট ভাইকে ফাঁসির আদেশ

প্রকাশিত: ৫:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১ | আপডেট: ৫:৩৮:অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় পিতা-মাতা ও ভাই,বোনসহ একই পরিবারের চারজনকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় আপন ছোট ভাই রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ প্রদান করেছেন সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামীর নাম রায়হানুর রহমান (৩৬) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইরুনিয়নের খলিষা গ্রামের প্রয়াত ডাঃ শাহাজাহান আলীর ছেলে।
মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এ আদেশ প্রদান করেন।

সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ জানান, সাতক্ষীরা বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম কোন হত্যা মামলায় মাত্র ২০ কার্যদিবসে রায়ের আদেশ হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জেলার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের বাসিন্দা শাহাজাহান হোসেনের তিন ছেলে। বড় ছেলে শাহীনুর রহমান আট বিঘা জমিতে পাঙাশ মাছ চাষ করতেন। মেজ ছেলে আশরাফ আলী মালয়েশিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান ছিলেন বেকার। তিনি বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে খাওয়াদাওয়া করতেন।

২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় রায়হানুর রহমান (৩৬)। সংসারে টাকা দিতে না পারায় তাঁকে মাঝেমধ্যে বকাবকি করতেন ভাই শাহীনুর রহমানের (৪০) স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০)। এর জের ধরে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে রায়হানুর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান। রায়হানুর রহমান তার ভাই শাহীনুর রহমান (৪০) ভাবী সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) প্রথমে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান। ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে ওই চারজনকে হাত ও পা বেঁধে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তবে ওই দম্পতির চার মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যান।
এদিকে, নিহত পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে। সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বেঁচে যাওয়া এই শিশুর দায়িত্ব নেন এবং সাতক্ষীরা থেকে বদলী হয়ে চলে যাওয়ার পূর্বমূহুর্তে মারিয়া ফাউন্ডেশন গঠন করেন। এই ফাউন্ডেশন মারিয়ার দায়িত্ব পালন করছে।
এ ঘটনায় নিহত শাহীনুর রহমানের শাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামের ময়না খাতুন থানায় ১৫ অক্টোবর হত্যা মামলা করেন। তখন কাউকে সন্দেহ করতে না পারায় তিনি আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করেননি।
তদন্তে নেমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা সন্দেহভাজন হিসেবে রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক, আবদুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত রায়হানুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মন্ডলের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। রায়হানুর রহমান বলেন, তিনি একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

রায়হানুর রহমানকে একমাত্র আসামি দেখিয়ে ২৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসাদুল, রাজ্জাক ও আব্দুল মালেককে মামলা থেকে অব্যহতি পান।

পরবর্তীতে দায়রা জজ আদালতে মামলার ১৮ জন সাক্ষী ও এক জন সাফাই সাক্ষী দেন। গত ২২ আগস্ট যুক্তিতর্ক শেষে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শেখ মফিজুর রহমান ২৯ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। ওই দিন সিনিয়র জেলা দায়রা জজ ছুটিতে থাকায় রায় ঘোষণা করা হয়নি। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক পরবর্তী দিন আজ মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ জানান, চাঞ্চল্যকরা এ মামলার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের ১০ মাস ১৬ দিন পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ মামলার যে রায় হয়েছে তাতে আগামিতে কোন ব্যক্তি যাতে এ ধরণের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সাহস না পায় তার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম কোন হত্যা মামলায় মাত্র ২০ কার্যদিবসে রায়ের আদেশ হয়েছে।

আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম হায়দার জানান, এ বিচারে তিনি খুশী হতে পারেননি। মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে এ রায় এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

এস/জি


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক