ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পাইকগাছায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ৯:১৫ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২১ | আপডেট: ৯:১৫:অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২১

পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে পড়া পানিতে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার বেলা ১১/১২টার দিকে ভরা পূর্ণিমার জোয়ারে অসংখ্য স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ ছাড়া বাঁধ উপচে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

ওয়াপদার বাইরের বেশিরভাগ চিংড়ি ঘের এবং ভিতরের অসংখ্য ঘের তলিয়ে কোটি কোটি টাকার মৎস্য ভেসে যায়। বিনষ্ট হয় কৃষি ফসল সহ ঘর-বাড়ী ও রাস্তা ঘাট। সোলাদানা বাজার ও পৌর বাজার তলিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হয়। জনপ্রতিনিধি, আনসার, প্রকল্প শ্রমিক, স্বেচ্ছাসেবক সহ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ করেছে। বাঁধ মেরামত সহ ক্ষয়ক্ষতি নিরপন ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনভর এলাকায় দমকা হাওয়া সহ বৃষ্টিপাত হয়।

 

বুধবার দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এলাকার নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, শহর রক্ষা বাঁধ উপচে পৌর বাজারের কয়েকটি মার্কেটের সড়ক তলিয়ে গিয়ে পৌরভবন পর্যন্ত পানি চলে আসে। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, হরিঢালী ইউনিয়নের মাহমুদকাটীর মালোপাড়া, কপিলমুনি ইউনিয়নের আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন পদ্মপুকুর এলাকা, লতা ইউনিয়নের পশ্চিম লতা, ধলাই গেট, দেলুটি ইউনিয়নের জকারহুলা, মধুখালী, চকরি-বকরি মুনকিয়া-দিঘলিয়া ও দেলুটির পূর্বপাশ, সোলাদানা ইউনিয়নের সোলাদানা বাজার, ভাঙ্গাড়িয়া, পাটকেলপোতা স্লুইচ গেট, হরিখালী, পারিশামারী, নুনিয়াপাড়া, সোলাদানা, পতন, বেতবুনিয়া ও হরিখালী আবাসন, লস্কর ইউনিয়নের আলমতলা হাটের ওপারে, কড়–লিয়া আনিচের ঘের হতে শাহআলম মেম্বরের বাড়ী পর্যন্ত, বাইনতলা, লস্কর উত্তর ওয়াপদা, পশ্চিম বিলের মান্নানের গেট, কড়ুলিয়া বিশুর বাড়ী হতে শিববাটী ব্রীজ পর্যন্ত এবং স্মরণখালীর ত্রিনাথ বাছাড়ের বাড়ীর সামনের গেট ও ভড়েঙ্গা গেট ভেঙ্গে এবং বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

রাড়ুলী ইউনিয়নের তোড়াডাঙ্গা ও ভড়বুড়িয়া এবং মালোপাড়া, গড়ইখালী ইউনিয়নের আবাসন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, প্লাবিত এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের পক্ষ থেকে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম।

 

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সার্বিক তদারকি করেছেন। ঘূর্ণিঝড় মূল আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে অনেক এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে এবং উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় চেয়ারম্যান, পুলিশ, আনসার, স্বেচ্ছাসেবক ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত করার চেষ্টা করেছি। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সঠিকভাবে এখনো নিরপন করতে না পারলেও অসংখ্য চিংড়ি ঘের, ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

আমিনুল ইসলাম বজলু। নিজস্ব প্রতিবেদক। পাইকগাছা, খুলনা