ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলজুড়ে এখন পরিস্থিতি থমথমে

প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২১ | আপডেট: ৯:০৭:অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলজুড়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফিট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

 

ইয়াস’র প্রভাবে বুধবার (২৬ মে) সকাল পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। আজ দুপুর পর্যন্ত জোয়ারের পানি যদি কোন আঘাত না হলে তাহলে আমরা এ যুদ্ধ কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে জানিয়েছেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ।

 

বুধবার সকালে এটি তীব্র গতিতে ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমান অগ্রসর অবস্থা অনুযায়ী এটি ভারতের উড়িষ্যার ভদ্রক জেলার ধামরা বন্দর ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোচ্ছে। 

 

আজ বুধবার দুপুরের দিকে এটি উপকূল অতিক্রম করবে। তখন উপকূলীয় অঞ্চলে ২-৪ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বুধবার (২৬ মে) সকালে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের অফিসার ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে,উপকূলীয় এলাকা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি, ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর, কাশিমারিসহ সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ হরিনগর এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদফতরের সতকর্তা সংকেতের উপর নির্ভর করছে মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার বিষয়টি।

এরই মধ্যে উপকূলের ঝড়ো হাওয়ার সাথে সাথে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। নদীগুলিতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার ১২টি অংশে বাঁধের উপর দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বালির বস্তা দিয়ে তা বন্ধের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বেড়িবাঁধের ৪০ টি পয়েন্ট খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের চাপে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার নাপিতখালি, পার্শ্বেমারী ও ৩নং সোরাসহ কয়েকটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি ওভার ফ্লো হয়ে চিংড়ি ঘের ও বসতি এলাকায় ঢুকতে থাকলে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বালির বস্তা দিয়ে তা বন্ধের জন্য প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছেন। পূর্ণিমার ভরাকাটাল ও পূর্ণচন্দ্র গ্রহণের সময় ইয়াস আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী। এর ফলে বেড়িবাঁধগুলি ভেঙে পানিতে সয়লাব হতে পারে উপকূলের জনপদ।

 

অপরদিকে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের ৮ টি টহল ফাঁড়ির সব সদস্যকে নিরাপদে সরে যাবার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহকারি বন সংরক্ষক এমএ হাসান বলেন, ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছাস হলে তাদেরকে উদ্ধার করে আনার জন্য নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, ঝড়ো বাতাসসহ টানা বৃষ্টি না থাকায় ইয়াস’র প্রভাবে বুধবার সকাল পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। আজ দুপুর পযন্ত জোয়ারের পানি যদি কোন আঘাত না হলে তাহলে আমরা এ যুদ্ধ কাটিয়ে উঠতে পারবো।

 

তিনি আরও জানান, বুধবার সকাল পযন্ত উপকূলীয় এলাকা পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী ও কৈখালির আশ্রয়কেন্দ্রে ৫/৬ মানুষ আশ্রায় নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় প্রত্যেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের অনুকূলে ২৫ হাজার টাকা প্রাথমিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার আগাম ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা বহনযোগ্য সম্পদ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।

 

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোড (পাউবো) বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, জোয়ারসহ তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে সীমান্তবর্তী পদ্মপুকুর, কৈখালী ইউনিয়নের তিনটি পয়েন্টে ভাঙন লাগার পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

 

তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার কারণে নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা জিও ব্যাগসহ শ্রমিক প্রস্তুত রেখেছি। উপকূলবর্তী এলাকা গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করা হয়েছে।

 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএস মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্য শ্যামনগর উপজেলার ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু জার গিফারি।

 

তিনি আরও জানান, এ ছাড়াও জেলায় দেড় হাজার স্কুল কলেজ মাদ্রাসাও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কোভিড পিরিয়ডে নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।

 

এসজি/ডেক্স


আপনার মতামত লিখুন :

নিজস্ব প্রতিবেদক। ডেক্স