কেশবপুরে ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

প্রকাশিত: ৪:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২০ | আপডেট: ৪:৪৫:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২০

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় ১৬টি ইটভাটায় অবৈধ ভাবে প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কাঠ পোড়ানো নিষেধ থাকলেও মানা হচ্ছে না। ভাটাগুলির বৈধ কাগজপত্র নেই। শিশুশ্রম আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও ভাটার মালিকরা তা মানছেন না। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি কেউ। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভাটাগুলির পাশের পরিবেশসহ গাছ, ফসলী জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত ২০ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ২টি ইটভাটা উচ্ছেদ করেছেন।

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলায় ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। ওই ভাটাগুলির পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। ভাটা গুলি হচ্ছে, কেশবপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পুর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী বরুনিয়া বাজার শ্রীনদী অববাহিকায় মেসার্স প্রাণ ব্রিকস, আগরহাটি এলাকায় মেসার্স প্রাইম ব্রিকস, সন্ন্যাসগাছা এলাকায় মেসার্স বিউটি ব্রিকস নামে ২টি ও মেসার্স এস, এস,বি ব্রিকস, সাতবাড়িয়া এলাকায় মেসার্স রহমান ব্রিকস, মেসার্স আলম ব্রিকস ও মেসার্স সুপার ব্রিকস, পৌরসভার ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকায় মেসার্স জামান ব্রিকস ও বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় মেসার্স খান ব্রিকস, বারুইহাটি এলাকায় মেসার্স রোমান ব্রিকস, বায়সা কালীবাড়ি এলাকায় মেসার্স গাজী ব্রিকস ও মেসার্স গোল্ড ব্রিকস, বেগমপুর এলাকায় মেসার্স রিপন ব্রিকস, দোরমুটিয়া এলাকায় মেসার্স কেশবপুর ব্রিকস ও বগা এলাকায় মেসার্স বিএসবি ব্রিকস। ভাটাগুলিতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। শিশুশ্রম আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও ভাটার মালিকরা তা মানছেন না। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের কোন কাগজপত্র নেই কারো।

সরেজমিনে ভাটাটি পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, মেসার্স প্রাণ ব্রিকসের পশ্চিমে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন পর্যটন কেন্দ্র ভরত রাজার (ভরতের) দেউল, বসতবাড়ি, ভরতভায়না বাজার, মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ ও কৃষি জমি রয়েছে। এভাবে প্রত্যেকটি ইটভাটার চারিপাশে রয়েছে বসতবাড়ি, মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ ও কৃষি জমি। ভাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, শস্যহানিসহ পরিবেশ রয়েছে মারাতœক হুমকির মুখে।

এলাকাবাসি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেসার্স জামান ব্রিকস ও মেসার্স রোমান ব্রিকস কয়েক দফা বন্ধ করে দেয় এবং জরিমানা আদায় করে। তারপরও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইটভাটার মালিকরা কাঠ পোড়াচ্ছে। ইট উৎপাদন ও বিকিকিনির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শিশুশ্রম আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও ভাটায় তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে ইট, কাঁদা বহনের কাজ। ইট পোড়ানোর জন্যে চিপনি ও চুলার পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে কাঠ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপণ নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করেই ভাটাগুলি চলছে। ভাটার পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে মাটি। ভাটার জন্যে ব্যবহারকারী ট্রাক ও ট্রাক্টরের ঘন ঘন যাতায়াতের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তা, পথচারীসহ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এর কালো ধোয়ায় পরিবেশ হচ্ছে বিনষ্ট, ঘটছে মারাতœক ফসলহানি। এরমধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর মেসার্স সুপার ব্রিকস ও মেসার্স রিপন ব্রিকসে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ইট পোড়নোর চিপনি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়াসহ ইট ও সরঞ্জাম বিনষ্ট করা হয়েছে।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গাজী ব্রিকসের সত্ত্বাধিকারী আরমান গাজী বলেন, চলতি বছর ভাটার কোন লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। পূর্বের আইনেই ভাটাগুলো চলছে। সম্প্রতি মেসার্স সুপার ব্রিকস ও মেসার্স রিপন ব্রিকস ২টি পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর জেলা অফিসের কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার, কেশবপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে উচ্ছেদ করেছেন। উপজেলা নাগরিক কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ইটভাটার মালিকরা আইন অমান্য করে কাঠ পোড়াচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। ভাটার জন্যে ব্যবহারকারী ট্রাক ও ট্রাক্টরের ঘন ঘন যাতায়াতের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তা, পথচারীসহ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এর কালো ধোয়ায় পরিবেশ হচ্ছে বিনষ্ট, ঘটছে মারাতœক ফসলী কৃষি জমিরহানি।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা বলেন, এ উপজেলায় ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। গত বছর এদের পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছিল না। ইতোমধ্যে কাঠ পোড়ানো ও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ২টি ভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ আনোয়ার বলেন, ইটভাটায় কোন কাঠ পোড়ানো যাবে না। নিষেধ থাকা সত্বেও ভাটার মালিকরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাঠ পোড়াচ্ছে। কেশবপুরের ভাটাগুলির পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। ২০ ডিসেম্বর ২টি ভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

মশিয়ার রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক। কেশবপুর, যশোর