লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ডিসেম্বরের বিজয় গাথা দক্ষিনাঞ্চলের

প্রকাশিত: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২০ | আপডেট: ১২:৪৩:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২০

যশোর বিজয়:

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত আক্রমণে টিকতে না পেরে যশোর সেনানিবাস থেকে খুলনায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় তৎকালিন পাকসেনারা। ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় খুলনা ও বাগেরহাট। যশোরে উড়ানো হয় বিজয়ের প্রথম পতাকা। জয়বাংলা স্লোগান’ প্রকম্পিত মুখরিত করে আকাশ-বাতাস। হাজার-হাজার মানুষের ঢল রাস্তায় নেমে আসেন মুক্তির আনন্দে শামিল হতে। পাকহানাদারমুক্ত প্রকৃতির নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে।অর্জিত হয় স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১টি সামরিক সেক্টরের মধ্যে যশোর ছিল ৮ নম্বর সেক্টর। মূলত বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা, ফরিদপুর ও খুলনা জেলার কিছু অংশ ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের আওতায়। এর সদর দফতর ছিল যশোরের বেনাপোলে। এ সেক্টরের প্রথম কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী। আগস্ট মাস থেকে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব নেন মেজর এমএ মঞ্জুর। তার অধীনে ছিলেন ক্যাপ্টেন আবু ওসমান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা। এ সেক্টরের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর বাইরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছিল বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)। এ বাহিনীর প্রধান ছিলেন আলী হোসেন মনি এবং ডেপুটি প্রধান ছিলেন রবিউল আলম।

স্থানীয়রা জানান, বিএলএফ’র নেতৃত্বে বৃহত্তর যশোর জেলায় (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল) একাধিক সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে। তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়। এ বাহিনীর সদস্যরা সম্মুখযুদ্ধে বীরোচিত লড়াইয়ে অংশ নেন।পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) জেলা কমিটির নেতাকর্মীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাহিনীর নেতা ছিলেন নুর মোহাম্মদ। পরে এর দায়িত্ব নেন বিমল বিশ্বাস

স্থনীয় যুদ্ধে অংশগ্রহনকারীরা জানান, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা অক্টোবর পর্যন্ত বৃহত্তর যশোরের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু, ‘দুই কুকুরের লড়াই’ তত্ত্বে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অক্টোবর মাসে দলের নেতাকর্মীরা যুদ্ধে বিরতি দেন।

অন্যদিকে, পাকিস্তানি বাহিনীর ১০৭নম্বর ব্রিগেড মোতায়েন ছিল। এর কমান্ডার ছিলেন বিগ্রেডিয়ার হায়াত খান। যশোর সেনানিবাস থেকে শত্রু বাহিনী ৬টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করত।

প্রথম শহীদ হন চারুবালা ধর:

যশোরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক শপথ নেন ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ। এদিন যশোর কালেক্টরেটের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে যশোরবাসী শপথ নেয়। শহরের রাজপথে বের হয় মিছিল। মিছিলটি শহীদ সড়কে (তৎকালীন কেশবলাল রোড) পৌঁছলে হানাদার বাহিনী গুলি চালায়। এতে শহীদ হন চারুবালা ধর নামে এক নারী। তিনিই ছিলেন মুক্তি সংগ্রামে যশোরের প্রথম শহীদ। মুক্তিকামী মানুষ শহীদ চারুবালার লাশ নিয়েই শহরে মিছিল চালিয়ে যায়। এরপর থেকেই যশোরে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ। নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। ভোলা ট্যাংক রোডের তৎকালীন ইপিআর দফতরে সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্রজনতার সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধের প্রস্ততি হিসেবে ২৩ মার্চ কালেক্টরেট চত্বরে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কুচকাওয়াজ করে। সেনানিবাসে সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২৬ মার্চ রাতে তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য মসিয়ূর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে। ২৯ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী যশোর শহর ছেড়ে সেনানিবাসে চলে যায়। ৩০ মার্চ যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকরা ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ৩১ মার্চ কমিউনিস্ট নেতা শেখ আবদুস সবুর ও আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে নড়াইল অস্ত্রাগার থেকে সংগৃহীত অস্ত্রসহ বিশাল একটি বাহিনী যশোর আসে। তারা তৎকালীন ইপিআর-এর সহযোগিতায় বিস্ফোরক সংগ্রহ করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার অভিমুখে রওনা হয়। জেলের তালা ভেঙে কারাগারে থাকা প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অমল সেনসহ বহু রাজবন্দি ও সাধারণ বন্দিদের মুক্ত করে। পরে এ বাহিনী যশোর সেনানিবাস ঘেরাও করে। তিন দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ক্যান্টনমেন্ট থেকে গোলা ছুড়তে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী। এ সময় শেখ সবুরের নেতৃত্বাধীন হালকা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে প্রচন্ড যুদ্ধে লে. আনোয়ারসহ চারজন শহীদ হন। কুমিল্লার শাহরস্তি থানার সন্তান শহীদ লে. আনোয়ারের বীরত্বগাথা আজও অমলিন।

যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের বারীনগর বাজারের অদূরে কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের সামনে এ বীর শহীদ শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন।

৪ এপ্রিল পাকবাহিনী ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, কামানসহ শহরে হামলা চালায়। অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হঠতে বাধ্য হন। শুরু হয় পাকআর্মিদের নিষ্ঠুরতা। তারা শহরের নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। পাকবাহিনীর গণহত্যায় পুরো শহর পরিণত হয় বধ্যভূমিতে। শান্ত ভৈরবের পানি লাল হয় শহীদের রক্তে। পাকবাহিনীর এ বর্বরতা অব্যাহত থাকে জুলাই পর্যন্ত। ইতোমধ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধের গতিধারা পাল্টে যায়। পাকবাহিনীর বর্বরতার পাশাপাশি পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা।  প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহর ও অন্যান্য এলাকায় হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে প্রচন্ড আক্রমণ চালাতে থাকেন।

ঐতিহাসিক মল্লযুদ্ধঃচৌগাছার জগন্নাথপুরের যুদ্ধ:

যশোরের রণাঙ্গনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি সংঘটিত হয় চৌগাছার জগন্নাথপুর ও মসিয়ূর নগরে। ২০ নভেম্বর মুক্তি ও মিত্রবাহিনী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণার বয়রা সীমান্তপথে যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে। ঝিকরগাছার ছুটিপুর থেকে মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস লক্ষ্য করে কামানের গোলা নিক্ষেপ শুরু করে। সেনানিবাসকে অবরুদ্ধ করতে বয়রা-কাবিলপুর-গরিবপুর হয়ে এগোতে থাকে ট্যাংকবাহিনী। এদিন ছিল ঈদের দিন। সকালে চৌগাছার জগন্নাথপুরের মানুষ তৈরি হচ্ছে ঈদ উদযাপনের জন্য। এমনই এক সময় হানাদার পাকবাহিনীর ২০/২৫টি গাড়ি ঢোকে জগন্নাথপুর (বর্তমানে মুক্তিনগর) গ্রামে। ঈদের দিন  বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাখির মত লুটিয়ে পড়েছে মানুষ। বর্বর পাঞ্জাবি সেনারা দেখামাত্রই গুলি চালাতে থাকে। একদিনেই তারা হত্যা করে ৩০ জনকে; যাদের সবাই নিরীহ, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। সংসদ সদস্য মসিয়ূর রহমানের ভাই আতিয়ার রহমানসহ আরও দুজনকে পুড়িয়ে মারলো ওই দানবরা। বাড়ির পর বাড়ি আগুন জ্বালিয়ে ছারখার করে দিল। অসহায় মানুষ তাদের প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিক পারলো, পালালো। এরপরও কিছু মানুষ বাপ-দাদার ভিটে আঁকড়ে পড়ে ছিলেন। সন্ধ্যায় ছদ্মবেশধারী চার মুক্তিযোদ্ধা এসে তাদেরও অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। বললেন, রাতে বড় ধরনের যুদ্ধ হবে। জনমানবশূন্য নীরব নিস্তব্ধ জগন্নাথপুর গ্রাম সহসাই প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোলাগুলির শব্দে। শুরু হয় ভয়ংকর যুদ্ধ। মসিয়ূর নগরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামও পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে।

মুক্তি আর মিত্রবাহিনী অবস্থান নেয় জগন্নাথপুর গ্রামের চাড়ালের বাগানে। ট্যাংকবহর নিয়ে পাকবাহিনী গ্রামে ঢোকামাত্রই তাদের সাতটি ট্যাংক ধ্বংস করে দেয় মিত্রবাহিনী। এক পর্যায়ে পশ্চিমপাড়ার তেঁতুলতলায় অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনী। সেখান থেকেই তারা গোলা ছুঁড়ছিল। সেসময় পাকবাহিনী ছিল বাঁশবাগানে। প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দের সঙ্গে হাজারো সৈন্যের গগনবিদারি চিৎকার, আর চেঁচামেচি। দীর্ঘসময় ধরে যুদ্ধ চলায় গুলি তখন শেষের দিকে। দু’পক্ষই চলে আসে কাছাকাছি। একশ’ গজের মধ্যে। জগন্নাথপুর স্কুল মাঠে শুরু হয় হাতাহাতি, মল্লযুদ্ধ। বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে তাণ্ডব।

২২ নভেম্বর আবারও বিমান হামলা চালায় পাকবাহিনী। মিত্রবাহিনীও পাল্টা বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের তিনটি স্যাবর জেট জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করে। ধবংস করে আরও সাতটি ট্যাংক ও বহু সাঁজোয়া গাড়ি। পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকবাহিনী। মিত্রবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গাড়ে জগন্নাথপুরে। এ যুদ্ধে দু’পক্ষের সহস্রাধিক সৈনিক মারা যায়। মুক্তিবাহিনী এরপর মিত্রবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হামলার পর হামলা চালাতে থাকে। এগিয়ে যেতে থাকে যশোরের অভিমুখে। ইতিহাসে এটি জগন্নাথপুরের যুদ্ধ নামে খ্যাত।

এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৯৬জন নিহত এবং মুক্তিবাহিনীর ৫৭ জন শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে ১৯জনের নাম পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এখানে একটি স্মৃতিসৌধে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়।

অ্যাডভোকেট তজিবর রহমান। যশোরের চৌগাছা উপজেলার খোর্দ্দ সিংহঝুলি (বর্তমান নাম- মসিয়ূরনগর) গ্রামের বাসিন্দা। সেইসময় তার বয়স ৮-৯ বছর। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা- মসিয়ুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বলেই এখানে আমাদের বাড়ির দহলিজ ঘরে ঘাঁটি গাড়ে পাকবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খাবার এবং খবর পৌঁছে দিতাম আমি ও আমার মা মরিয়ম বিবি।’

তিনি জানান, পাকবাহিনী তার চাচা এলাহী বক্স, চাচাতো ভাই আলী বক্স, আলী বক্সের মা, আরেক চাচা লোকমান বক্সের স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন তাদের গ্রামের মোট ১৭জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যুদ্ধের সময় তাদের গ্রামের সব বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় হানাদাররা।

একই গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান বিশ্বাস বলেন, ‘২০ নভেম্বর থেকে পাকবাহিনীর সঙ্গে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। কোনও পক্ষেরই বাঙ্কার ছিল না। সম্মুখযুদ্ধ যাকে বলে। দুদিন পর ২২ নভেম্বর দু’পক্ষেরই গোলা বারুদ শেষ হয়ে যায়। এরপর মুখোমুখি অবস্থান নেয় পাকবাহিনী ও যৌথবাহিনী। বেলা ১১টার দিকে দু’পক্ষের হাতাহাতি যুদ্ধ হয়।’

যুদ্ধে তাদের গ্রামের মোট ২২জন শহীদ হন বলে তিনি জানান।

মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর যশোর:

হানাদার বাহিনী যশোরের চৌগাছা উপজেলার সলুয়া বাজারে তৈরি করে অগ্রবর্তী ঘাঁটি। এসময় যশোর সেনানিবাসের তিন দিকেই মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। এ তিন দিন যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালাতে শুরু করে। এদিন সকাল ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রচন্ড লড়াই হয়। বিকালেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝে যান, যশোর দুর্গ আর কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। বেনাপোল অঞ্চলে দায়িত্বরত লে. কর্নেল শামসকে নওয়াপাড়ার দিকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিগ্রেডিয়ার হায়াত। আর নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে খুব গোপনে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনি পালিয়ে যান খুলনার দিকে। পালানোর সময় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচন্ড লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকালে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী সেনানিবাসে ঢুকে দখলে নেয়।

সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘যশোর গেজেটিয়ার’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ৬ তারিখ সন্ধ্যা হতে না হতেই পাকবাহিনীর সবাই যশোর ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর ও মিত্র বাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোরে প্রবেশ করেন। তখনও তারা জানতেন না যে যশোর ক্যান্টনমেন্ট শূন্য। তারা বিস্মিত হন কোনও প্রতিরোধ না দেখে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যশোর জেলা কমান্ডার রাজেক আহমদ বলেন, ‘৬ ডিসেম্বরেই আমরা যশোর শহর থেকে শত্রু সেনাদের বিতাড়িত করি। কিন্তু, সেদিন যশোর শহর ছিল জনশূন্য। ফলে পরদিন ৭ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল বের হয়।’

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে ৭ ডিসেম্বরকেই যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হতো। কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধা ও ইতিহাসবিদদের দেওয়া তথ্যমতে ২০১০ সাল থেকে ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

৮ ডিসেম্বর যশোর শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় মুক্তিবাহিনী।

১০ ডিসেম্বর প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেন ওয়ালিউল ইসলাম। ১১ ডিসেম্বর প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরে টাউন হল মাঠে জনসভা হয়। সেখানে ছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ। অফিস-আদালতে কার্যক্রম শুরু হয় ১২ ডিসেম্বর।

স্বাধীন বাংলার  জনসভায় প্রথম বক্তৃতা করেন তাজউদ্দিন আহমেদ:

১১ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির একটি স্মরণীয় দিন। আর যশোরবাসীর জন্য এ দিনটি গৌরব ও অহংকারের। এ দিন যশোরের মাটিতে পাক হানাদারবাহিনীর কবলমুক্ত স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা হয়। ভাষণ দিয়েছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর যশোর টাউন হল ময়দানে এ বিজয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তবাংলার প্রথম এ জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’

সেদিন তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এমআর আকতার মুকুল ও জহির রায়হান প্রমুখ।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশ দেন, আইনশৃঙ্খলায় যেন কোনও অবনতি না হয়।

একইসঙ্গে জনতাকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।’

বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’র (বিএলএফ) ডেপুটি প্রধান রবিউল আলম ওই সমাবেশে ছিলেন। তিনি জানান বক্তব্যের এক পর্যায়ে তাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘স্বাধীন এ দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’

মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এসএইচ সানবার্গ, ওয়াশিংটন পোস্ট’র প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক।

এর আগে ৬ ডিসেম্বর বিকালের মধ্যেই যশোর শহর থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে চলে যায়। এদিন বিকালে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায়ও চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে আনন্দে উল্লাস করে গোটা জেলার মানুষ। 

সাতক্ষীরা:

১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। এর পরই রুখে দাঁড়ায় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা। তারা যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের খরচ বহনের জন্য ব্যাংক থেকে টাকা ও অলংকার লুট এবং অস্ত্র লুটের দিয়ে শুরু মুক্তি সংগ্রাম। ৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় দুই শতাধিক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হন তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হন আরও দুইজন মুক্তিযোদ্ধা।

এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ,খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এ সব যুদ্ধে শহীদ হয় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

পাকিস্তানি সেনা বাহিনীকে বিদ্যুতের আলো থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ৩০ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যায় পাক সেনারা। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে হানাদাররা।

৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল,কদমতলা ও বেনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় জ্বলে ওঠে সাতক্ষীরা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরায় অনেক অজ্ঞাত সহ যে বীর সন্তানরা শহীদ হয়ে ছিলেন তাদের নাম হলো- শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, হাফিজউদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, আবু বকর, ইমদাদুল হক, জাকারিয়া, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, আমিনউদ্দিন গাজী, আবুল কালাম আজাদ, সুশীল কুমার, লোকমান হোসেন, আব্দুল ওহাব, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, মুনসুর আলী, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, শেখ হারুনার রশিদ প্রমুখ।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন,এ দিনে সাতক্ষীরাকে হানাদার মুক্ত করা হয়েছিল। এই দিনটি সাতক্ষীরার মানুষের জন্য গর্বের দিন।

 

খুলনা:

খুলনা বিজয় হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর। এদিন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়ে যুদ্ধ শেষের ঘোষণা দেন। খুলনায় পাকিস্তানিদের পতন ঘটে, মুক্ত হয় খুলনা। আজ সেই খুলনা মুক্ত দিবস।

১৬ ডিসেম্বর খুলনার শিরোমণি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছিল। মুক্তি ও মিত্র সেনারা উজ্জীবিত ও বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত থাকলেও পাকিস্তানি সেনারা প্রবলভাবে প্রতিরোধ করে চলছিল।

খুলনার গল্লামারী রেডিও স্টেশন (আজকের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা), লায়ন্স স্কুল, বয়রার পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কলোনি এলাকা, সাত নম্বর জেটি এলাকা, নূরনগর ওয়াপদা (বর্তমানের পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভবন,

গোয়ালপাড়া, গোয়ালখালি, দৌলতপুর, টুটপাড়া, নিউ ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন প্রভৃতি এলাকায় মুক্তিসেনাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের লড়াই হয়।

মুক্তিবাহিনীর খুলনা অভিযানে ফোয়াম উদ্দিন ও লে. নোমানউল্লাহ তাঁদের বাহিনী নিয়ে সেনের বাজার, রাজাপুর ও রূপসা ঘাট এলাকা দিয়ে শিপইয়ার্ড, হাসপাতাল ও গোয়ালখালী এলাকার পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে আক্রমণ করেন। বোরহানউদ্দিন ও তাঁর দল ক্রিসেন্ট জুট মিল ও নৌ ঘাঁটি এলাকার পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে হামলা করেন।

 

ক্যাপ্টেন শাজাহান মাস্টার ও তাঁর বাহিনী কুলটিয়া নামক অবস্থান থেকে রেডিও স্টেশন আক্রমণ করেন। আফজাল ও কুতুবউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল মুক্তিসেনা সাচিবুনিয়ার দিক থেকে লায়ন্স স্কুলের পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন।

মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে এক কম্পানি মুক্তিসেনা ছিলেন ভৈরব নদীসংলগ্ন এলাকায়, যাতে পাকিস্তানিরা নদীপথে পালিয়ে যেতে না পারে তা প্রতিহত করতে। এ ছাড়া লে. আরেফিন ও

কমান্ডার খিজিরের নেতৃত্বে নদীপথে ছিলেন আরো একদল মুক্তিসেনা। পরিকল্পিত এই আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা তাদের মরণপণের ইচ্ছাটি ধরে রাখতে পারেনি। পাকিস্তানিদের মনোবল ভেঙে যায়। মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত তীব্র আক্রমণের মুখে ব্রিগেডিয়ার হায়াত তাঁর নিউজপ্রিন্টের ডেরা থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

বাগেরহাট:

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও বাগেরহাট হানাদার মুক্ত হয় তার এক দিন পর ১৭ ডিসেম্বর। সেদিন বাগেরহাট শহরের ডাকবাংলোতে অবস্থিত রাজাকারদের ক্যাম্প দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন র্বোড (মদনের মাঠ) ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। বর্তমান জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ছিল রাজাকারদের বিচারালয় আর মাঠ টর্চার সেল ।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা উদগ্রীব হয়ে পড়ে। তারা শহর দখলের পরিকল্পনা করে। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বাগেরহাট শহরের ডাকবাংলোতে অবস্থিত রাজাকারদের ক্যাম্প দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়।

রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এ.কে.এম. ইউসুফের জন্মস্থান বাগেরহাটে হওয়ায় তখনও বাগেরহাট ছিল রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এবং সব চেয়ে বড় ঘাটি। রাজাকার ইউসুফের দোসর খুলনা অঞ্চল প্রধান রাজাকার রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে বাগেরহাটে তখনও ব্যাপক লুটপাট, মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা ও নির্মম নির্যাতন অব্যাহত ছিল।
এদিন সকালে জেলার চিতলমারীর সন্তোষপুরে অবস্থিত বাগেরহাট সাবসেক্টরের হেডকোয়ার্টার থেকে সাবসেক্টর কমান্ডার তাজুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের ফল-ইন করিয়ে মোট দুটি গ্রুপে ভাগ করে বাগেরহাট শহরের দিকে রওনা হন। তাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বড় দলটি মুনিগঞ্জ খেয়া পার হয়ে বাগেরহাটে পদার্পণ করেন। অন্যদিকে ছোট দলটিকে সুলতানপুরের পথে বাগেরহাট মাঝিঘাট দিয়ে নদী পার করানো হয়। দ্বিতীয় দলের নেতৃত্ব দেন কমান্ডার রফিকুল ইসলাম খোকন ও সৈয়দ আলী।

বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকার ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আলবদর ও পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে।এখানেই ছিল সব চেয়ে বড় ক্যম্প কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদাররা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।

১৭ ডিসেম্বর দুপুরে বাগেরহাট শত্রুমুক্ত হয়। বিজয়ের আনন্দে শহরবাসী সাধারণ মানুষ উল্লাস করতে থাকে। মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
বাগেরহাট শহর মুক্তি সমরে অংশ মুক্তিযোদ্ধা নকীব সিরাজুল হক বলেন, ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী বাহিনীর সদস্যরা কেউ পালিয়ে যায় আর কেউ আত্মসমর্পণ করে। সমগ্র বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা বর্তমান স্বাধীনতা উদ্যান এলাকায় ওড়ানো হয়।’

 

সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা: লেখক ও কবি: ম.ম. রবি ডাকুয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

ম.ম. রবি ডাকুয়া। প্রতিবেদক। বাগেরহাট, খুলনা