চুকনগরে ভুল চিকিৎসায় মৃত নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলে পোস্ট মর্টেমের নির্দেশ

প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২০ | আপডেট: ৯:১৮:অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২০
চুকনগর হালিমা মেমোরিয়াল নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার।

ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার মামলায় বাদীকে ম্যানেজ করে আদালতে নারাজী আবেদন জমা দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছেনা  আসামী খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজলার চুকনগর হালিমা মেমোরিয়াল নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের। গত ৩ নভেম্বর মামলার ধার্য্য তারিখে বাদীর আবেদন শুনানী শেষে বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ডুমুরিয়া খুলনার বিজ্ঞ বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে মৃত নব জাতকের লাশ কবর থেকে তুলে পোস্ট মর্টেমের আদেশ দিয়েছেন  মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। 

সোহাগ মাল্টিমিডিয়া এন্ড ট্র্যাভেলস

সূত্রে জানা যায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী কেশবপুর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের মো: হেলাল উদ্দীন গাজী তার সন্তান সম্ভাবনা স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম (২০) কে চুকনগর বাজারের হালিমা মেমোরিয়াল নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এ সময়ে ক্লিনিক মালিক কথিত ডাক্তার কামাল হোসেন তিনিসহ অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক বয়োবৃদ্ধ মো: বরকত উল্লাহ সহ কয়েকজন নার্স ইয়াসমিন বেগমের সিজারিয়ান অপারেশন করে। এসময়ে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। অপারশন করার সময়ে নবজাতক পুত্রের পেটে ছুরিরাঘাতে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যায়। তখন তারা শিশুটির কাটা পেট সুপার গ্লু আটা দিয়ে জোড়া দিয়ে ক্লিনিক থেকে বের করে অন্য ক্লিনিকে নিতে বলেন। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

শিশুটি মারা গেলে হাসপাতালের মালিক কামাল হোসেন,  নার্স তহমিনা বেগমসহ অন্যরা এ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি না করতে এবং ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত শিশুটির পিতা হেলাল হোসেন গাজী ক্লিনিক মালিক কামাল হোসেনকে প্রধান আসামী করে চিকিৎসক, নার্সসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে গত ৫ অক্টোবর ডুমুরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সাময়িক ভাবে ক্লিনিক বন্ধ রেখে গাঁ ঢাকা দেয়।

এরপর এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে একটি কুচক্রী মহল ঘটনার শুরু থেকে ম্যানেজ মিশন নিয়ে মাঠে নামে বলে জানা যায়। এক পর্যায়ে তারা মামলার বাদীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে গত ১৫ অক্টোবর নোটারী পাবলিক, খুলনা হতে বাদী ভবিষৎ এ মামলা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নয় মর্মে এফিডেভিট সম্পাদন করে আদালতে আবেদন জানান।

গত ৩ নভেম্বর মামলার ধার্য্য তারিখে বিজ্ঞ আদালত বাদীর আবেদন না মঞ্জুর করে মৃত নব জাতকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পোস্ট মর্টেম করার জন্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, যশোর জেলা প্রশাসক ও যশোর জেলা সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিতকরেছেন।

স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ওই ঘটনার পর গত ৩ নভেম্বর উপজেলার চাকুন্দিয়া গ্রামের বাবুল গাজীর স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করতে যেয়ে ভুল চিকিৎসায় আবারও নব জাতকের মৃত্যু  ঘটনা ঘটেছে। কিন্ত হত দরিদ্র বাবুল গাজী কোন মামলা মোকর্দমা বা ঝামেলায় জড়াতে চান বলে জানিয়েছেন।

এদিকে ২০১৫ সালে ওই ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনে কেশবপুর উপজেলার ভেরচি গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের একজন গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনার মামলায় ক্লিনিক মালিক কামাল হোসেন জেল-হাজতে প্রেরিত হন।

 

অভিযোগের ভিত্তিতে আরো জানা যায়, ধুরন্ধর কামাল হোসেন ক্লিনিক ব্যবসায় আড়ালে মূলত নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা, মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। প্রায় প্রতিরাতেই মদ ও নারীদের আসর বসে।

তার ক্লিনিকের কথিত নার্সরা কেউই ডিপ্লোমা পাস নয়। কামাল হোসেন খুঁজে খুঁজে সুন্দরী, অসহায়, দরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েদের মোটা অংকের বেতনের লোভ দেখিয়ে নার্স হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে নানাভাবে তাদেরকে ফাঁদে ফেলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। লোকলজ্জার ভয় ও জীবীকার তাগিদে মুখ বুঝে অন্যায়কে সহ্য করতে হয়। এসকল বিষয়ে জানতে কামাল হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো: হামিদুল হক বলেন, আদালতের আদেশ মোতাবেক লাশ উত্তোলনের প্রস্তুুতি নেয়া হচ্ছে। আসামী গ্রেফতারে ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কাউকে পাওয়াযায়নি।

খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বলেন, চুকনগর হালিমা মেমোরিয়াল নার্সিং হোমে এক প্রসূতির নবজাতক মারা গেছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

গাজী আব্দুল কুদ্দুস। নিজস্ব প্রতিবেদক। চুকনগর, খুলনা